জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদী জমি খুঁজে বের করে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।অনাবাদী জমি খুঁজে বের করা তো দূরের কথা, রাজশাহীর মোহনপুরে ফসলি জমি নষ্ট করে আবার শুরু হয়েছে পুকুর কাটার ধুম। প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কৃষকরা।
গত ২৩ জুলাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিথিলা দাস ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং কঠোরভাবে আব্দুল্লাহকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, যতটুকু খনন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভরাট করে দিতে হবে। এই স্বত্বেও তারা ছাড়া পায়।
২৬ জুলাই অদৃশ্য কারণে আবাও রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের দূর্গাপুর ছোট বিলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন অব্যাহত রেখেছে পুকুর খননকারী দালাল আব্দুল্লাহ ও সমাট্র নামের ব্যক্তি।
অভিযোগ মতে, প্রশাসন খুবই দায়সারাভাবে অভিযান করছে। পুকুর খাদকদের সামান্য অর্থ জরিমানা করছেন। জরিমানার টাকা গুণে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার শুরু হচ্ছে খনন। এলাকাবাসীর অভিযোগে আরও জানা গেছে, দুই-তিন ফসলি ও অপেক্ষাকৃত নিচু জমিগুলো পুকুর খাদকদের মূল টার্গেট।
রাজশাহীর মধ্যে মোহনপুর উপজেলা বিভিন্ন বিল এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খননের ধুম পড়েছে এবং তা চলছে গত কয়েক মাস ধরে। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন দায়সারা অভিযান পরিচালনা করছেন, তবে থামাতে পারছে না পুকুর খনন যজ্ঞ। প্রতি বছর মোহনপুর উপজেলার পুকুরের পেটে শত শত বিঘা ফসলি জমি চলে গেছে।
ফলে চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলে আবাদি জমিতে পুকুর খননে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এর পরও মোহনপুর দেদারসে পুকুর কাটার কাজ চলছে। মোহনপুর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন , ফসলি জমি উজাড় করে মোহনপুরে যেভাবে পুকুর কাটা হচ্ছে, তাতে আগামীতে চাষাবাদের জন্য কোনো জমি আর অবশিষ্ট থাকবে না।
এদিকে পুকুর খনন বন্ধে স্পষ্টভাবে আইন থাকার পরও আইনের সঠিক প্রয়োগ না করার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। উপজেলার তশোপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, পুকুর খনন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বিশেষ কোনো কাজে আসছে না।
কারণ যারা পুকুর কাটছেন তাদের কাছে কয়েক হাজার টাকা জরিমানা তেমন বিশেষ কিছুই নয়। বরং পুকুর খননের যন্ত্রপাতি জব্দ করে রাখা হলে পুকুর খননে কিছুটা ভাটা পড়ত। কারণ রাতারাতি এসব ভেকু মেশিনসহ যন্ত্রপাতি সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব হতো না।
এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ্ জোহরা জানান, উপজেলায় অবৈধ পুকুর খনন করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলেই অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ পুকুর খননকারীরা কাজ শুরুর আগে প্রশাসন ও পুলিশসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেন। এসব ক্ষেত্রে বিপুল টাকার লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।
ফলে এলাকাবাসীর চাপে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও বাস্তবে কোনো ফল হচ্ছে না। প্রশাসনের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলে প্রভাবশালীরা ঠিকই পুকুর কেটে ফেলছেন।