রাজশাহীতে ২০ দিনেও অপহৃত এক গৃহবধুকে উদ্ধার করতে পারেনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। গত ১৯ এপ্রিল রাত পৌণে আটটার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার নিউমার্কেটের থিম ওমর প্লাজার নিচ থেকে অস্ত্রের মুখে গৃহবধুকে অপহরণ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ এলাকার সামশুল হুদা লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের ও তার সহযোগীরা।
অপহৃত গৃহবধুর নাম মরিয়ম খাতুন (২২)। সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার হরিশপুর শেখালীপুর গ্রামের মোহা: উজ্জ্বলের মেয়ে। উজ্জ্বলের পরিবার বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন মহিষবাথান এলাকায় বসবাস করেন। গত ২১ এপ্রিল অপহৃত গৃহবধুর মা জান্নাতুন নেসা বাদী হয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
এদিকে বাদীর অভিযোগ গত ২০ দিনেও পুলিশ তার মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাঁরা মেয়ে হারিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। দুই বছর আছে মরিয়মকে বিজিবি সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। পড়াশোনার প্রয়োজনে মরিয়ম মায়ের কাছে থাকতেন। তাঁর মেয়েকে অপহরণকারী চক্রের হোতা জোবায়ের ও তার পরিবার অর্থের লোভে হত্যা করতে পারেন বলেও আশঙ্কা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে গৃহবধুকে উদ্ধারে পুলিশের অবহেলার কারণে তাঁর স্বামী বিজিবি সদস্য নজরুল ইসলাম গত ৯ মে রাজশাহীর সিএমএম আদালতে অপহরণকারী জোবায়েরসহ সাতজনকে আসামি করে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১২৬। আদালত মামলা রেকর্ড করে ভিকটিম উদ্ধারে পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ এপ্রিল অপহৃত মরিয়ম খাতুন (২২) তাঁর স্বামী বিজিবি সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে কেনাকাটা করতে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার থিম ওমর প্লাজায় যায়। স্বামী নজরুল ইসলাম স্ত্রীকে দাঁড়াতে বলে মোটরসাইকেল গ্যারেজ করতে যান। কিন্তু মোটরসাইকেল গ্যারেজ শেষে ফিরে নজরুল ইসলাম তার স্ত্রীকে আর দেখতে পাননি।
বহু খোঁজাখুঁজির পর তিনি জানতে পারেন গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ এলাকার জোবায়ের নামের এক যুবক ও তার পরিবারের লোকেরাসহ সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে মরিয়মকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এই ঘটনায় মরিয়মের মা জান্নাতুন নেসা ২১ এপ্রিল বোয়ালিয়া মডেল থানায় জোবায়েরসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন।
কিন্তু পুলিশ গত ২০ দিনেও অধহৃত মরিয়মকে উদ্ধার করতে পারেননি। মরিয়মের মা বাবা ছাড়াও স্বামী নজরুল ইসলাম বারবার পুলিশকে অনুরোধ করলেও পুলিশ ভিকটিম উদ্ধারে উৎসাহ দেখান নি বলে অভিযোগ। শেষে স্ত্রী উদ্ধারে ভিকটিম মরিয়মের স্বামী বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
অপহৃত মরিয়মের মা ও মামলার বাদী জান্নাতুন নেসা অভিযোগে আরও বলেন, আমরা মেয়ে উদ্ধারে পুলিশের কাছে ঘুরছি। পুলিশ বলছে আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না।
বাদী আরও বলেন, শুধুমাত্র অর্থের লোভে তার মেয়েকে অপহরণ করেছে জোবায়ের। তাকে এই অপরাধ কাজে সহায়তা করেছেন তার বাবা সামশুল হুদা লোকমান, ভাই শাহীন, দুই বোন নিপা আক্তার ও মুক্তা আক্তার এবং জুলেখা নামের এক নারী। আসামিরা মরিয়মকে তারা জোর করে আটকে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তার মা জান্নাতুন নেসা।
এবিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, আমরা ভিকটিম মরিয়মকে উদ্ধারে একাধিক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। মামলাটি তদন্ত করছেন শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহফুজ। পুলিশ মরিয়মকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।