কৃষি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষকদের মধ্যে সহজ শর্তে কৃষিঋণ, কৃষিতে ভর্তুকিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করছে সরকার। তেমনি পাটের উৎপাদন বাড়াতে ও চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পাটচাষিদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রণোদনার পাটবীজ-সার বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন কৃষকেরা।
কৃষকেরা বলছেন, যাঁরা সরকারি পাটবীজ পেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই প্রকৃত পাটচাষি নন। এক বিঘা চাষযোগ্য জমি না থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাট কর্মকর্তারা স্বজনপ্রীতি করে পাটবীজ বিতরণ করেছেন। অপরদিকে যারা পাটবীজ পেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের অভিযোগ, বীজ পেলেও তাঁরা প্রণোদনার সার পাননি। এমন পরিস্থিতিতে, স্থানীয় পাট উন্নয়ন অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে ধরনা দিয়েও বীজ-সার না পাওয়ায় এ মৌসুমে পাট চাষ ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার কৃষককে জনপ্রতি এক কেজি পাটবীজ ও ১২ কেজি সার বরাদ্দ দেওয়া কথা রয়েছে। তবে সার বরাদ্দ না থাকায় চলতি মৌসুমে সার দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ হলে সার বিতারন করা হবে।সার বরাদ্দ না হওয়ার কারনে কৃষকপ্রতি ছয় কেজি ইউরিয়া, তিন কেজি টিএসপি, তিন কেজি এমওপিসহ মোট ১২ কেজি সার থেকে বঞ্চিত হয়েছে নড়াইলের কৃষক।
সারের বিষয়ে জানতে চাইলে হবখালী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বর আলমগীর ফকির ( মেয়ের) বলেন, ‘পাটের বীজের সঙ্গে কোনো সার দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পাট কর্মকর্তা। পাট বীজ বিতারণে কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি হয়নি।
ইউনিয়নের সাধুখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ৯০ শতক জমিতে পাট চাষ করি। আমাকে পাট বীজ দেওয়া হয়নি। স্বজন প্রীতির মাধ্যমে বীজ বিতাররণ করা হয়েছে।
তুলারাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, প্রণোদনার সার- বীজ পেয়ে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো কৃষক না পেলে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের কাছে খোঁজ নিতে হবে।
শেখহাটি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এরশাদ শেখ
বলেন, তিনি নিজ হাতে কিছুই বিতরণ করেননি। বরাদ্দ পাওয়া বীজ ও সার সঠিকভাবে লোক মারফত পাঠানো হয়েছে।
সাধুখালী গ্রামের কৃষক আজমল মোল্লা বলেন, ‘বাজারে সার ও বীজের দাম গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। ভেবেছিলাম প্রণোদনা পেলে পাট চাষ করব। যাদের এক বিঘা জমি নেই, তাদের পাটের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা জমি তৈরি করে রেখেও বীজ-সারের প্রণোদনা পাইনি।’
পাটের প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, অধিকাংশ তালিকা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের বরাদ্দ করা বীজ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় ৩ হাজার কৃষকে পাট বীজ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় নাম থাকার পরও কোনো কৃষক বীজ ও সার সঠিকভাবে না পেয়ে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।