সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার
পশ্চিম সীমান্ত এবং পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুংগলী ইউনিয়নের বিলচান্দক গ্রামের পূর্ব
সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে গোহালা নদী। এই নদীর দু’পাড় দিয়ে বিশাল গোচারণ ভূমিতে লাখ
লাখ গরু চরে বেড়ায় সারাবছর। বিশাল সংখ্যক গরুর খাদ্য যেমন জোগান দেয় গোহালা নদী
পাড়ের হাজারো একর গোচারণ ভূমি তেমনি খাবার পানির সর্বরাহ করে এই নদীটি। এছাড়া
হাজার হাজার একর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া হয় এই নদীর পানি দিয়েই। কিন্ত কালের বিবর্তনে
নদীতে পলি জমে অগভীর হয়ে পড়লে নাব্যতা ফেরাতে বালুমহল ঘোষণা করে গতবছর ইজারা দেয়
সরকার।’ কিন্ত এই এজারাই কাল হয়ে যায় নদী পাড়ের কৃষকদের। অপরিকল্পিত ড্রেজিং এবং
নির্ধারিত পয়েন্ট ছেড়ে অন্য স্থান থেকে গভীর করে বালু উত্তোলন করায় নদী পাড়ের ফসলী জমিতে
তীব্র ধস নেমেছে। ইতোমধ্যে কৃষকের অন্তত ৫০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং
শতশত বিঘা ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। ভরা বর্ষায় বালু
উত্তোলন করায় তাৎক্ষণিক কিছু বোঝা না গেলেও পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে ক্ষত।
এদিকে পুরানো ক্ষত শেষ না হতেই একই জায়গায় পুনরায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার গুঞ্জনে কৃষকদের
চোখেমুখে এখন আতঙ্কের ছাপ।
অপরদিকে গতবছর বালু উত্তোলন শুরু হলে কৃষকদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানালেও
প্রতিকার হয়নি। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড খ্যাত জনপদ বিশাল বাথান এলাকা রক্ষার জন্য মিল্কভিটার
পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানানো হয় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে। কিন্তু
প্রভাবশালী ইজারাদার এবং সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষ কোনকিছু কর্ণপাত না করে বালু উত্তোলন
অব্যাহত রাখে।’
এদিকে নির্ধারিত স্থান থেকে ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৫শত ঘনফুট বালু উত্তোলনের জন্য সরকার ইজারা
প্রদান করলেও প্রভাবশালী ইজারাদার ৮থেকে ১০ কোটি ঘনফুট বালু নির্ধারিত স্থানের বাইরে
থেকে উত্তোলন করায় নদী পাড়ের ফসলী জমি ধ্বসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের ।
বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে রিকুয়েস্ট করলেও কাজের কাজ কিছু
হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে কৃষকেরা জমি রক্ষার জন্য নিজেরাই বাধা প্রদান করে। আর এই বাধা
দেওয়াকে কেন্দ্র করে মামলায় পড়েন কৃষকেরা। এতে করে একদিকে যেমন কৃষকের ফসলী জমি চলে
গেছে নদীগর্ভে অন্যদিকে মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে জমি হারানো কৃষকদের।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন করেছে সিরাজগঞ্জের
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি গ্রামের এবং পাবনার ফরিদপুর উপজেলার
পুংগলী ইউনিয়নের বিলচান্দক গ্রামের শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। গোহালা
নদীর তীরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রেশমবাড়ি গ্রামের জমির মালিক
এনামুল হক নয়ন মাস্টার, সাইফুল ইসলাম মাস্টার, কৃষক আব্দুল খালেক, বিলচান্দক গ্রামের কৃষক
রুহুল আমিন প্রমুখ।’
এসময় বক্তারা নতুন করে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবী জানিয়ে বিশাল গোচারণ ভূমি এবং কৃষকের
ফসলী জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ জাতীয় আরো খবর ....