1. admin@crimenews24.net : cn24 :
  2. zpsakib@gmail.com : cnews24 :
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পুরাতন সাতক্ষীরা মোড়ে গণআন্দোলন জোটের পথসভা মৌলভীবাজারে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রী চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত  মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার’র সাথে সাংবাদিকদের  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  সিরাজগঞ্জ বেলকুচিতে বেসরকারি ৩ ক্লিনিকের দুই লাখ টাকা জরিমানা  আলমডাঙ্গায়  সংবাদ সম্মেলন করেছে ফিড ব্যাবসায়ী বাবুলার রহমান নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে তরুণদের র‍্যালি, মানববন্ধন তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  তানোরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রাখতে নড়াইলে ইউপি চেয়ারম্যানের স্মারকলিপি প্রদান রায়পুর, হাসাদহ এবং  কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্প আকস্মিক পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার

স্বাদে অতুলনীয় সিরাজগঞ্জের কুমড়া বড়ি 

মোঃ সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ থেকেঃ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৬১ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। শীতের খাবারে মুখরোচক স্বাদ আনতে মাছ-সবজিতে কুমড়া বড়ির প্রচলন দীর্ঘ দিনের। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে অতিযত্ন সহকারে এই খাদ্যপণ্যটি তৈরি করে থাকেন সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা।
এদিকে কুমড়া বড়ি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করেও ইতোমধ্যে অনেকে অস্বচ্ছল পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। এই সবজি আর মাছ রান্নাতে ভোজন রসিক খাবারে ব্যবহার হয় ঐতিহ্যবাহী কুমড়া বড়ি।
কুমড়া বড়ির কারিগররা জানান, দেশিয় উপাদানে তৈরি করা হয় কুমড়ার বড়ি। প্রথমে গাছপাকা সাদা বর্ণের চালকুমড়া কুচি কুচি করে কাটতে হয়। তারপরে কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে পাটায় বেটে নিতে হয়। পরে চালকুমড়া আর কলায়ের ডাল একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মাখিয়ে বাঁশের চাটাইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করে বিছিয়ে দিতে হয়। দুই-তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে কুমড়ার বড়ি।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসুর ডাল (চিকন) এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, যা ৫ মাস আগে ছিল ১১০ টাকা। মসুর ডাল (মোটা) এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাষকলাই ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। অ্যাংকার ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। মুগের ডাল এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। একটি কুমড়ো ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
তাড়াশ উপজেলার বড়ি তৈরি চাতালের মালিক মুনছুর আলী বলেন,বড়ি তৈরি করতে প্রথমে প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু এখন মেশিনের মাধ্যমে ডাল গুঁড়ো করা হয়, শুধু হাতের মাধ্যমে বড়ি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। প্রতিদিন আমার চাতালে ১২০ থেকে ১৩০ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড়ি চাতাল থেকে পাইকারি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রয় করা যায়। সরকারের দেয়া কিছু সুবিধা পেলে বড় পরিসরে বড়ি তৈরি করে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
উপজেলার নওগাঁ গ্রামের কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন,বর্তমানে মাষকলাই ডালের কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, মসুর ডালের কুমড়ো বড়ি ১৪০ টাকা কেজি। আর অ্যাংকার ডালের কুমড়ো বড়ি প্রতি কেজি ১০০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা বিক্রিতে কেজিতে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। সম্প্রতি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটা কমেছে।’
শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর জাহানারা খাতুন বলেন,প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কুমড়া বড়ি তৈরি করছি। মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়ার মিশ্রণে রোদে শুকিয়ে তৈরি করতে হয় এই বড়ি। কুমড়া বড়ি দিয়ে কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল ভোজন রসিকদের বেশ জনপ্রিয় খাবার। এই কুমড়া বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এ কারণে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আমার মত এখন এলাকার শত শত নারী কুমড়া বড়ি তৈরির
কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
মনোয়ারা খাতুন নামের অপর এক নারী বলেন,শীত মৌসুমে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হয়। শীতের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য বড়ি তৈরি করে থাকেন।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর আব্দুল মতিন বলেন,আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছে, আমিও বড়ি তৈরি করছি।’ এখন আমার ছেলে আর নাতিপুতি তৈরি করছে। বর্তমানে এই গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি পরিবার কুমড়া বড়ি তৈরি করে। সেই বড়িগুলো স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে। শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ো বড়ির একটা যোগসূত্র খুঁজে পান অনেকেই। তাই চাহিদাও বেড়েছে এ সময়। অপর কারিগর আল-আমিন বলেন,একটা সময় কুমড়া বড়ি তৈরির জন্য শীল-পাটায় সারা রাত ধরে পরিবারের মেয়েরা ডাল বাটতেন।, পরের দিন তা বড়ি বানিয়ে শুকাতে দেওয়া হতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় ছেলে মেয়েরা বেলেন্ডার মেশিনের সাহায্যে ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ডাউল গুঁড়া করে বড়ি তৈরি করে ফেলে।,
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান,মাঁচা ও টিনের চালে কৃষকরা চাল কুমড়ার চাষ করে থাকেন। চাল কুমড়া থেকে বড়ি তৈরি করা হয়। বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ চাল কুমড়ার চাহিদা বাড়ে। তাই অনেক কৃষক চাল কুমড়াও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন। গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রাশেদুল রহমান বলেন,এই কুমড়া বড়ি গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যের অংশ। এই কাজের সঙ্গে বেশির ভাগ নারী শ্রমিক জড়িত। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড়ি তৈরির কারিগরদের একটি তালিকা করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ সল্প সুদে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হবে।, বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। বিশেষ করে নারী ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তবে অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2022 crimenews24.net
Design & Developed By : Anamul Rasel