1. admin@crimenews24.net : cn24 :
  2. zpsakib@gmail.com : cnews24 :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়ে আওয়ামী লীগ বধ্যভূমি তৈরি করেছিল: টুকু সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের উপর হামলা এবং ডিসি কর্তৃক গালাগাল করার প্রতিবাদে মানববন্ধন নিজের চেহারা একবার আয়না দিয়ে দেখুন: মৌলভীবাজারে জামায়াতের আমীর শ্রীমঙ্গলে শিশু ধর্ষণ মামলায় আটক ২ তানোরে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতারণায় প্রথম স্ত্রী নিঃস্ব সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ রাজশাহীতে হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক- ৮ সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ সভা মাছের উৎপাদন বৃদ্বিতে সুন্দরবনে প্রকল্প হাতে নিয়েছে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আটক 

‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি’

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৩৫ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
(ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার শক্তি কোথায়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি। তিনি আবার জানতে চেয়েছেন, আপনার দুর্বল দিকটা কী? তাঁর উত্তর ছিল, আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারবো না। বাঙালির ভালোবাসার ঋণ বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করব ইনশাল্লাহ)
শুরু এখান থেকে:
ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু অবিনশ্বর। কোনো আদর্শের যেমন মৃত্যু হয় না, তেমনি কিছু কিছু ক্ষণজন্মা মানুষেরও মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধুও ছিলেন তেমনি একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ, একটি আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাস।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার মধুমতী নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ‘শেখ’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুনের চার কন্যা (মোসামৎ ফাতেমা বেগম, আসিয়া বেগম, আমেনা বেগম ও খোদেজা বেগম) এবং দুই পুত্রের (শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ আবু নাসের) মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। পিতা-মাতা আদর করে তাঁকে ‘খোকা’ বলে ডাকতেন। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’, ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘জাতির পিতা’।
শেখ মুজিবের রাজনীতিবিদ হয়ে বেড়ে উঠা শুরু হয় তাঁর স্কুল জীবন থেকে। শৈশবেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বঙ্গবন্ধু সুদীর্ঘ ২৪ বছর পাকিস্তানি নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করে বারবার ফাঁসির মুখোমুখি হয়েও তাঁর আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে একটুও পিছপা হননি। তাই তো সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৩৮ সালে মিশন স্কুলের ছাত্র হিসেবে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফরকালে কংগ্রেসের বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও সফলভাবে তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করেন। তারা এগজিবিশন উদ্বোধন করেন। এরপর হক সাহেব পাবলিক হল পরিদর্শনে যান, আর সোহরাওয়ার্দী সাহেব মিশন স্কুল পরিদর্শন করেন। স্কুল পরিদর্শনকালে অবিভক্ত বাংলার শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিকট দাবি-দাওয়া উত্থাপন কালে স্কুলের ক্যাপ্টেন শেখ মুজিবের হৃদ্যতা স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে কলকাতায় যাওয়ার পর সোহরাওয়ার্দীর আরও কাছের মানুষ হয়ে উঠেন।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়াকালীন শেখ মুজিব তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ এমএসসি পরিচালিত ‘মুসলিম সেবা সমিতি’-এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ ছাত্রদের বই, পরীক্ষার ফি, জায়গিরের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খরচ জোগান দিতো। হঠাৎ মাস্টার সাহেব যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর শেখ মুজিব সেবা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১২, পৃ. ৮-১০) ম্যাট্রিক পাস করার পরে ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং কলেজের বেকার হোস্টেলে সিট পান। ১৯৪৩ সালেই জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন এবং ওই বছরই তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতাস্থ ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৪৬ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশভাগের পরও তিনি কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রতিবাদে শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে অনশনে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগে শরিক হন। ১৯৪৮ সালে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রগতিবাদী ছাত্রগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাতে শেখ মুজিব মূল্যবান ভূমিকা রাখেন। এই মুসলিম ছাত্রলীগই পরবর্তীকালে অসাম্প্রদায়িক ছাত্রলীগে পরিণত হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে, তাতে তিনি নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১১ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে বাংলা ভাষা দাবি দিবস হিসেবে ধর্মঘট আহ্বান করে। এ দিন ঢাকার সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনের সড়কে বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে তিনি আরও ৭০ থেকে ৭৫ জন সহকর্মীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ৭ মার্চ তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ধর্মঘট ঘোষণা করে। এই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান সমর্থন দেওয়ায় কারণে আরও অনেকের সঙ্গে তিনিও শাস্তি পান। আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র (রোল-১৬৬, এস. এম. হল) শেখ মুজিবকে হয় ১৫ টাকা জরিমানা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় ১৭ এপ্রিলের মধ্যে জরিমানা এবং অভিভাবক কর্তৃক প্রত্যায়িত মুচলেকা দিতে হবে। অন্যথায় ১৮ এপ্রিল থেকে ছাত্রত্ব বাতিল হবে। ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শেষ হলে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। অনেকে এই অন্যায্য জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব বজায় রাখলেও শেখ মুজিব জরিমানা ও মুচলেকা দিতে অস্বীকার করেন। ১৮ এপ্রিল থেকে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল হয় অর্থাৎ তিনি বহিষ্কৃত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনের সময় ১৯ এপ্রিল তিনি আবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেখ মুজিব অনেকবারই কারাবন্দি হন এবং মুক্তি পেয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যান। দীর্ঘ কারাভোগের পর ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়ে রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হন।
১৯৫৩ সালের ৩ জুলাই ঢাকায় দলের প্রথম তিন দিনব্যাপী কাউন্সিলের প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে আওয়ামী মুসলিম লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন। ৫ জুলাই কাউন্সিলের সকালের অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের ৮ থেকে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ দক্ষিণ মুসলিম কেন্দ্র থেকে তিনি প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ১৯৫৪-এর ১৫ মে তিনি প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে যোগ দেন। সামান্য কয়েক দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার এই মন্ত্রিসভা বাতিল করে এবং এ দিনই তিনি আবার বন্দি হন এবং ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৫ সালে যখন নতুন করে গণপরিষদ গঠিত হয় তখন তিনি এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকায় দলের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যখন আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠন করে তখন তিনি আবারও মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয় এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। প্রায় চার বছর পরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেওয়া হলেও নানা ধরনের আইন-কানুন দিয়ে রাজনীতিকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর পরই ১২ অক্টোবর তিনি পুনরায় কারাবন্দি হন এবং ১৪ মাস জেল খেটে ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করেন।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরেই সংবাদ সম্মেলন করে শেখ মুজিব বাঙালির মুক্তি সনদ বিখ্যাত ছয়-দফার ঘোষণা দেন এবং অব্যবহিত পরেই ১৯ মার্চ ১৯৬৬-তে ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত দলের তিন দিনব্যাপী কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ১৫ বছর সফলভাবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর কাউন্সিলররা সর্বসম্মতভাবে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ৯ মে তিনি আবার কারাবন্দি হন এবং একনাগাড়ে প্রায় তিন বছর কারাবন্দি থাকেন। তাঁকে আগরতলা ‘ষড়যন্ত্র’ মামলায় অর্থাৎ ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ নামে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় প্রধান আসামি করা হয়। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নিষ্কৃতির রাস্তা পেতে রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর গোলটেবিল বৈঠক ডাকেন। এদিকে ছয়-দফা ও ছাত্রসমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে ঢাকায় ছাত্র-জনতার প্রচণ্ড গণ-আন্দোলনে আসাদ, মতিউর, জহুরুল, ড. জোহাসহ অনেকের আত্মত্যাগে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে। আগরতলা ‘ষড়যন্ত্র’ মামলা প্রত্যাহার করে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আইয়ুব সরকার। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছয়-দফা পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় মুক্তি সনদে পরিণত হয়। এ সময়ে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক জান্তা সরকার তালবাহানার আশ্রয় গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মুক্তিপাগল বীর বাঙালির সামনে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী নির্বিচারে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যায় মেতে ওঠে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশ শত্রুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর পরই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে দখলদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ৯১ হাজার ৫৪৯ সৈন্যের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।
এদিকে গোপনে কারাগারের অভ্যন্তরে প্রহসনমূলক বিচারের নামে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানি জান্তা সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় এবং বিশ্ববাসীর চাপে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন-দিল্লি হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি নয় মাসের মধ্যেই জাতিকে উপহার দেন একটি আধুনিক বিশ্বমানের সংবিধান। বাঙালি এই প্রথম পেল তার নিজস্ব শাসনতন্ত্র।
বঙ্গবন্ধুই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের স্বপ্ন, জনগণের আকাক্সক্ষার কথা জাতিসংঘে দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ কেন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিল, কী তাঁর ত্যাগ, কোন্ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রটির এসব ইতিহাস উঠে আসে তাঁর বক্তৃতায়। রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ব্যাখ্যা করে সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাঙালির এ মহান নেতা। দীর্ঘদেহী, স্মার্ট, সুদর্শন আর আভিজাত্যপূর্ণ এক সৌম্য ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি নানা দেশের প্রতিনিধিরা।
১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত শ্রেণি, আমি শোষিতের দলে।’ এই ভাষণের পরে কিউবার তখনকার রাষ্ট্রপতি কিংবদন্তি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি আজ যে ভাষণ দিয়েছ, তারপর থেকে সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার পিছু নিয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ডের মতো অর্থাৎ শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি দিলেন, ঠিক তখনই ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে খুব ভোরে ঘাতকের গুলিতে শহীদ হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। বিদেশে থাকায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা ভেবেছিল তাঁর নাম পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দেবে। কিন্তু ঘাতকদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেয় শেখ মুজিবের মানবতাবাদী আদর্শ। বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হত্যা করা গেলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করা যায়নি। বাংলা ও বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে যারা চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছেন তারাই ইতিহাসে ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর অন্তরে কতো ভালোবাসা ছিল, তা পরিমাপ করা অসম্ভব। বঙ্গবন্ধু যখন বাংলার জনগণকে যা যা বলেছেন, বাংলার জনগণ তা-ই অকপটে মেনে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে এ দেশের মানুষ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেছে।
১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রদর্শিত ‘ডেভিড ফ্রস্ট প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ তিনি আবার জানতে চেয়েছেন, ‘আপনার দুর্বল দিকটা কী?’ তাঁর উত্তর ছিল, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারবো না। বাঙালির ভালোবাসার ঋণ বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করব ইনশাল্লাহ।’
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার সীমাহীন স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন তিনি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তাই পিতার স্বপ্ন সফল করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জীবিত শেখ মুজিব। আর এখন অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবেন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব, যিনি জীবিত মুজিবের চেয়েও বহুগুণে শক্তিশালী।
লেখক : পুলিশ সুপার, চুয়াডাঙ্গা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2022 crimenews24.net
Design & Developed By : Anamul Rasel