নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের দরি মিঠাপুর গ্রামে ফসলি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে সাদ ( SAAD)বিক্সর্স ইটভাটা। ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। অন্য দিকে ইট ভাটার নিকটে রয়েছে দরি মিঠাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইট ভাটার কালো ধোয়ায় শিশু কাল থেকে শ্বাসকষ্ট সহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই ইট ভাটা পরিচালনা করছে আব্দুল রহমান মোল্যার ছেলে জাহিদুল ইসলাম। ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোয়ার কথা বললে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে পারে না৷ । ঘন বসতি পূর্ণ লোকালয়ে প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তোলা এই ইট ভাটা বন্ধের দাবি জানান এলাকার সচেতন মহল।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে জেলায় ৭০টির ও বেশি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ টিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ব্যারেল চিমনি। সরেজমিন দেখা গেছে, লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে গাছপালা, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকারভেদে একটি ইটভাটা গড়তে কমপক্ষে পাঁচ একর (৫০০ শতাংশ) জমি প্রয়োজন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০-৪৫ একর জমিরও প্রয়োজন হয়। ১০ বছর আগে জেলায় হাতেগোনা ১৫-২০টি ভাটা ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে ৭০টিতে পৌঁছেছে। আর এসব ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে চার শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার ম্যানেজার জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০-৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। যে মাটির জোগান দেয়া হয় কৃষিজমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। সে হিসাবে ৭০টি ভাটাতে প্রতি বছর অন্তত সাড়ে ৩০০ একর জমির মাটি ব্যবহৃত হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রতিটি ভাটায় দৈনিক গড়ে ৩৫-৪০ মণ কাঠ পোড়াতে হয়। সে হিসাবে জেলার ৭০টি ইটভাটায় প্রতিদিন ২ হাজার ৪৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগৃহীত কাঠ এসব ভাটায় ব্যবহার করা হয়। গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে সাত থেকে আট মণ কাঠ পাওয়া যায়। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় আম, জাম, রেন্ট্রি, কদম, জামরুল, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ তিন শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার করলে নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে। কাগজে কলমে এসব আইনের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে ইটভাটা মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এসোসিয়েশনের সাথে আমি দেখা করবো। স্থানীয় নলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু কালাম আজাদ পাখি বলেন, এই অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের জন্য আমি একাধিক বার প্রশাসনকে বলেছি। এই ভাটার কারনে ওই জনপদের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।