রাজশাহীতে দুই জনের ১৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আলাদা তিনটি ধারার প্রতিটিতে আসামিদের পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জিয়াউর রহমান এই রায় দেন।
এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে প্রতিটি ধারায় কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা করে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে প্রতি পাঁচ লাখ টাকার জন্য আরও ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে দুই আসামিকে। আসামিদের তিনটি ধারার সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে জানান আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বেগম।
দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার এনায়েতুল্লাপুর সৈয়দপুর গ্রামের ওয়াসিম আল রাজী (৩৩) ও একই উপজেলার আলোকছত্র গ্রামের নাসিম আলী (২০)।
এদের মধ্যে ওয়াসিম আল রাজী নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করতেন। সাংবাদিক পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসিম ও নাসিম হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। গত বছরের ১ আগস্ট ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁরা ধর্মীয় উসকানিমূলক লেখা ও ছবি পাঠান। এতে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা হয়।
এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওয়াসিম হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেল করে তার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। তবে ওই ব্যক্তি টাকা দিতে রাজি না হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়াসিম ও নাসিম সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে মুঠোফোনে ভয়ভীতি দেখান।
বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ দুই জনকে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মুঠোফোনে ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে উসকানিমূলক ও আপত্তিকর ছবি পাঠানোর প্রমাণ মেলে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। পরে শুনানি ও মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বেগম বলেন, রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি আদালতের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিদের তিনটি ধারার সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, আদালতের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এ মামলার ঘটনাটি ভীষণ স্পর্শকাতর। স্থানীয় সাক্ষীরা সাহসী ভূমিকা না নিলে এবং ছবিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হলে অনেকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগত। এতে হয়তো আবার কুমিল্লা, রামু ও নড়াইলের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত।