চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন দীননাথপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম নামে একজন ব্যক্তি গত ২৭/০৮/২০২২ তারিখ গোধূলিলগ্ন পেরিয়ে সবেমাত্র সন্ধ্যা শুরু হয়েছে। এমন সময় থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারকে জানান তার ছেলে নাম আপন(১২) গত ২৬.০৮.২০২২ সন্ধ্যার পরে একই গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে শাশুড়ির জন্য খাবার দিয়ে আসার পথে নিখোঁজ হয়েছে। অপহৃত ঘটনা সংক্রান্তে একটি জিডি করতে চায়।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ডিউটি অফিসার ভিকটিম আপন(১২) এর পিতাকে অফিসার ইনচার্জ, সদর থানা, চুয়াডাঙ্গা’র অফিস কক্ষে নিয়ে আসে। ওসি সদর থানা তাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি জানান একই গ্রামে বাড়ি তার আপন ভায়রা অর্থাৎ স্ত্রী’র দুলাভাই এবং তার আপন শ্যালকের সঙ্গে গরু নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত শত্রুতা চলে আসছে। অনেকবার মারামারি গ্যাঞ্জাম হয়েছে, তারা আমি ও আমার ছেলেকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। তারা যোগসাজশে অপহরণের ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে সন্দেহ করে।
ওসি সদর ভিকটিমের পিতার সাথে কথা বলে জানতে পারেন তার শ্যালক বাড়িতে নেই, তাকে ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। ওসি সদর ঘটনা সংক্রান্তে জিডিতে অন্তর্ভুক্ত করে সারা বাংলাদেশে বেতার বার্তা প্রদান করেন।
ঘটনার বিষয়ে ওসি সদর তাৎক্ষণিকভাবে আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, পুলিশ সুপার, চুয়াডাঙ্গা মহোদয়কে জানান। পুলিশ সুপার মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিম আপনকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক আনিসুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), জনাব মাহাব্বুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, সদর থানা, চুয়াডাঙ্গা থানার চৌকস টিমের সমন্বয়ে ঘটনাস্থলে রওনা করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেটির মায়ের আহাজারি দেখে খুব সন্দেহ হয়। দীর্ঘসময় তদন্তের পর একপর্যায়ে তদন্তের দু’টি বিষয় পরিস্কার ফুটে ওঠে। শত্রুপক্ষ ঘটনা ঘটিয়েছে নতুবা শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কোন নাটক তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি উদঘাটন করতে খানিকটা বেগ পেতে হয়। বিচক্ষণতার সাথে উভয় পক্ষকেই নজরদারিতে রাখা হয়।
কিছুক্ষণ পরে ভিকটিম আপনের বাবা সাইফুল ইসলাম ফোন করে জানায় তার ছেলেকে পাট দিয়ে হাত বাঁধা এবং গায়ে কাদা লাগানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাকে দুই দিন মাঠের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইলের মাধ্যমে ওসি সদর ছেলেটির সঙ্গে কথা বললে ছেলেটি জানায় সপ কাউকে চিনতে পারেনি। তার হাত মুখ বেঁধে লুকিয়ে রেখেছিল। ভিকটিম আপনের বাবা-মা আপনকে নিয়ে থানায় আসে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম আপন ও তার বাবা-মা পূর্বের ন্যায় একই বক্তব্য প্রদান করে। ভিকটিম আপনকে কৌশলে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে সে স্বীকার করে যে সে বাড়ি থেকে রাগ করে চুয়াডাঙ্গা শহরে তার এক আত্মীয়ের বাসায় এসেছিল। পুলিশের টিম তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটিকে নিয়ে ঘটনার সত্যতা নিরূপণের জন্য ওই আত্মীয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করে।
রওনা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই থানা থেকে সংবাদ আসে ছেলেটির মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন ছেলেটির মায়ের প্রতি সন্দেহ একটু বেশি সৃষ্টি হয় যে, নিশ্চয়ই মা এই ঘটনা জানে বিধায় আসল সত্য ফাঁস হওয়ার জন্য অসুস্থতার অভিনয় করছে। ভিকটিমের মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ছেলেটির মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাকে বিভিন্ন ধরনের মোটিভেশন করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম আপনের মা জানায় যে, তার ভাইবোনদের ঘায়েল করার জন্য সে এই নাটকটি সাজিয়েছিল। যা তার স্বামী নিজেও জানতেন না।
তাই, সকলের প্রতি অনুরোধ রাগ বা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্যে কেউ এরূপ ঘটনা সাজাবেন না। কারণ, সবসময়ই সত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে।