রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তার হত্যার বিচার দাবী করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, অধ্যাপক আব্দুল আলিম, অধ্যাপক সায়েদা আনজু, অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন, অধ্যাপক আক্তার বানু আলপনা প্রমূখ।
রিক্তা মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা দাবী করে অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, রিক্তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার প্রাথমিক তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু এটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার পায়তারা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।
সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অধ্যাপক আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা ফরেনসিক বিভাগ থেকে জেনেছি, রিক্তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতে এটাকে আত্মহত্যা বলা হচ্ছিল। আমরা চাই তদন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করে বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাই। কেননা তদন্ত ধীরগতি হলেই সুষ্ঠু বিচারে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয় বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।
সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, রিক্তার মৃত্যতে আমরা শোকাহত এবং আমাদের হৃদয় রক্তাক্ত। আমরা কোনো ভাবেই তার হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছি না। এই হত্যাকান্ডের পিছনে যারা দ্বায়ী তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্থির দাবি জানাই।
তিনি রিক্তার পরিবারের অবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, রিক্তার ভাইয়েরা মাছ বিক্রি করে তার বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতেন। এরকম একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন আজকে থেমে গেছে। আমাদের সন্তান তুল্য এই ছাত্রীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আইন বিভাগের এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান সভাপতি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী রিত্তার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা দাবি করার পাশাপাশি তার চরিত্র নিয়ে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো খুবই মর্মান্তিক অ্যাখ্যা দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এমনকি শোকসন্তপ্ত পরিবারকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করার পাশাপাশি আইনি অগ্রগতি সহায়তায় কথা জানান তারা।
এরআগে, ৩০ জুলাই রাত ১২ টার দিকে নগরীর বিনোদপুর এরাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিক্তা আক্তারের (২১) মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে স্বামী রাব্বির বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মৃত ছাত্রীর বাবা লিয়াকত আলী জোয়ার্দার। সেই প্রেক্ষিতে রাব্বিকে গ্রেফতার দেখান পুলিশ।
উল্লেখ্য, পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের মৃত শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গনিত বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক রাব্বি। বিবাহের পর থেকে নগরীর ধরমপুর পূর্বপাড়া (বিনোদপুর) এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে আসছিলেন তারা।