রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব আলীর অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে বারবার নৌকার বিপক্ষে অবস্থান, দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মারধর, মাদ্রাসা-গোরস্থানের জমি গোপনে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ এনে রবিবার (২৬ জুন) বেলা ৪টায় পারিলা বাজারে এসব কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী। কর্মসূচিতে স্থানীয় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নিয়ে সোহরাবের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এহিয়া তালুকদার, পারিলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শফিকুল আলম, পারিলা ইউনিয়নের সাবেক আলাউদ্দিন মন্ডল, ৪ নং সাবেক সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান, সংরক্ষিত মেম্বার মমতাজ বেগম, জালাল উদ্দীন তালুকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নির্বাচনে বারবার নৌকার বিপক্ষে অবস্থান ও মাদ্রাসা-গোরস্থানের জমি গোপনে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ সত্বেও গত ১৯ জুনের কাউন্সিলে বিতর্কিত নেতা সোহরাব আলীকেই রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়।
সভাপতি হয়েই গত বুধবার (২২ জুন) রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিবের ওপর দলবল নিয়ে হামলা চালান সোহরাব আলী। খবর পেয়ে তাঁকে রক্ষায় আসেন তাঁর বাবা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে পারিলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করা প্রবীন নেতা হেলাল উদ্দিন তালুকদার। এ সময় তাঁকেও মারধর করা হয়। পবা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম চঞ্চল তাঁদের রক্ষার চেষ্টা করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। পরে তাঁরা তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
বক্তরা আরও বলেন, বিতর্কিত নেতা যাতে পুনরায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি না হতে পারেন, সে জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
পত্রপত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এই ক্ষোভে তাদের উপর হামলা চালায় সোহরাব আলী, তার ছোট ভাই আসাদুল ও কামরুল, ছেলে সৌমিক, ক্যাডার সম্রাট, হাবিবসহ কয়েকজন। এসময় সোহরাব ও তার ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে গালিবকে বলেন, তোর লিটন (রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র) বাপের কাছে অভিযোগ করিস, এখন তোর বাপকে বল, তোকে বাঁচাতে।
এ বিষয়ে পবা থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেনি। তাই দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সোহরাব আলীকে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিতর্কিত নেতা সোহরাব আলীর অপসারণ ও গ্রেপ্তার দাবিতে একটি ঝাড়ু মিছিল বের হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পারিলা বাজারে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সোহরাব আলীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। কর্মসূচিতে স্থানীয় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা-গোরস্থানের জমি গোপনে বিক্রি, স্থানীয় সমস্যা সমাধানের নামে ও চাকুরির প্রলোভনে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান সোহরাব আলী। সেই প্রভাবে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এবার প্রার্থীও হয়েছিলেও তিনি।
কিন্তু নানা বিতর্কের কারণে পদে আসতে পারেননি। পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেও যেন বিতর্কিত নেতা সোহরাব পদ না পান এজন্য দাবি জানান এলাকার ত্যাগী নেতারা। তবুও গত ১৯ জুন পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সোহরাব হোসেনই সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন।