রাজশাহী জেলার বাগমারাতে তদন্তে গিয়ে দাদন কারবারিদের রোষানলে পড়েছে পুলিশ ও অভিযোগকারি। এ সময় তাদের হামলায় পাঁচজন আহত হন। লাঞ্ছিত করা হয় পুলিশের দুই কর্মকর্তা। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের আক্কেলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাগমারা উপজেলার আক্কেলপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর ও গনিপুর গ্রামের ১৭টি গড়ে তোলা হয়েছে সমবায় সমিতি। এর মধ্যে আক্কেলপুর গ্রামে ১০টি ও দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামে ৭টি। এসব সমিতির মধ্যে দুইটি শাখা করা হয়েছে গনিপুর গ্রামে।
অনুমোদনহীন এ সব সমিতিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিনিয়োগ করে উচ্চ সুদে দাদন (ঋণ) কারবার চালাচ্ছে। তাদের দাদনের জালে সর্বোশান্ত হয়েছে এলাকার শতশত কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ সব সমিতির বিরুদ্ধে গত ১ জুন গনিপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম নামের এক যুবক থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাগমারা থানার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহমেদ অভিযান চালিয়ে আক্কেলপুর বারনই সমিতির কোষাধাক্ষ্য শাহীন আলমকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই সমিতির তিনজন উল্লেখ করে ৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রজু করে। মামলার অপর দুই আসামী বারনয় সমিতির সভাপতি রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম।
এ মামলা কেন্দ্র করে বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে দাদন ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন ও জাকিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাজশাহী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে অভিযোগ আনা হয় ওসি অর্থের বিনিময়ে তাদের হয়রানি করছেন। এ অভিযোগের তদন্তে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনতন চক্রবর্তি। তার সঙ্গে ছিলেন বাগমারা থানার এসআই মানিক মিয়া ও এএসআই রাজু আহমেদ। তারা সবাই সাদা পোষাকে তদন্তে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, বিকেল ৪টার দিকে বাগমারা থানার দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে আক্কেলপুর মোড়ে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনতন চক্রবর্তি। এ সময় সেখানে ডাকা হয় অবৈধ দাদন কারবারি রাকিব ও জাকিরুলকে। এছাড়াও সেখানে যান দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদি আশরাফুল ইসলাম। এছাড়াও সেখানে যান বেশ কয়েকজন ভুক্তযোগি।
আশরাফুল ও ঋণের জালে জর্জরিত ভুক্তভোগি দুলাল হোসেন, দুলাল আলী, শরিফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক। সেখানে যাওয়ার পর দাদন কারবারিদের রোশানলে পড়েন মামলার বাদি ও ভুক্তভোগিরা। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এসআই মানিক ও এএসআই রাজু তাদের সরিয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রায় ২০০ গজ যাওয়ার পর পিছন থেকে দাদন কারবারিরা তাদের উপর হামলা করে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়াসহ আহত হন পাঁচজন। এদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ও শরিফুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুর রাজ্জাক জানান, তদন্তের জন্য পুলিশ তাদের সেখানে ডেকেছিল। সে কারণে তারা সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পিতিভাবে দাদন কারবারিরা পুলিশের সামনে আমাদের উপর হামলা করে। এ সময় তারা দুলাল হোসেনের মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে।
তিনি বলেন, পুলিশের এক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার বড়ভাই এসব সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি নিজেও ওই সব অবৈধ সমিতির মধ্যে প্রায় ১০টি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েকটি সমিতির অর্থও তার ব্যাংক একাউন্ডে জমা হয় বলে শুনেছি।