জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন সেলিম ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ জনগণ। সেলিম হোসেন পিয়ন হিসেবে জীবননগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করলেও চলাফেরা করেন প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে। তিনি ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৭৩৪২ নম্বরের সাদা রঙের প্রাইভেটকারে করে অফিসে আসেন। এছাড়াও নিজ গ্রাম দামুড়হুদা শহরে তাঁর রয়েছে দুইতলা ভবন ও মার্কেট। অভিযোগ রয়েছে, সেলিম সরকারিভাবে পিয়ন পোস্টে চাকরি করলেও টাকা ভাগ নেওয়ার জন্য সপ্তাহে রোববার ও সোমবার দুই দিন অফিস করেন। বাকি তিন দিন ছুটি না নিয়ে কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বাড়িতে ছুটি কাটান। পিয়ন সেলিম এবং দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলামের সিন্ডিকেট দ্বারা চলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সব কার্যক্রম।
সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ লাখ টাকার দলিলে ৬ হাজার ৫শ টাকা এবং পৌরসভার মধে ১ লাখ টাকার দলিলে ৭ হাজার ৫শ টাকা খরচ নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে দলিল লেখক সমিতির নাম করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ লাখ টাকার দলিলে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয় এবং পৌরসভার মধ্যে ১ লাখ টাকার দলিলে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। জমি রেজিস্ট্রিসহ বিভিন্ন সেবার নামে তারা হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত টাকা। এতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। এই চক্রকে টাকা না দিলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেন সাধারণ ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার বাঁকা গ্রামের আক্কাচ আলীর ছেলে মসলেম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মা মারা গেছে, এ জন্য আমার বাবা আমার নামে জমি দিচ্ছে। আমি দানপত্র করার জন্য একজন দলিল লেখকের কাছে গেলে তিনি বলেন ২২ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি ওয়েবসাইটে দেখি সরকারি খরচ ১ হাজার ৫ শ টাকা। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ওই দলিল লেখক আমাকে বলে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও অফিস পিয়নকে টাকা না দিলে কোনো কাজ হবে না।’ এদিকে সাব-রেজিট্রি অফিসের পিয়ন সেলিম হোসেনের প্রাইভেটকারে চড়ে অফিস করা এবং নিয়মিত অফিস না করায় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর দলিল লেখক সমিতির ১০৩ জন সদস্য রয়েছে। রোববার ও সোমবার সপ্তাহে দুই দিন জমি রেজিস্ট্রি হয়। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে যে টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে, তা প্রতি সোমবার সন্ধ্যার আগে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম ভাগ করেন।
এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন সেলিম হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, এ জন্য সপ্তাহে দুই দিন অফিস করি। আর আমি যে প্রাইভেটকারটি নিয়ে আসি, সেটা আমার না, ভাড়া নিয়ে আসি।’ গাড়ির মালিকের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ির মালিক কে, আমি বলতে পারব, না গাড়ি চালায় ড্রাইভার।’ ড্রাইভার কোথায় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দলিল লেখক সমিতির নামে কোনো অতিরিক্ত টাকা আদায় করিনি এবং আমার ছেলের নামে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সদস্য আছে ১০৩ জন। এর মধ্যে ৯৩ জনের মধ্যে টাকা ভাগ করা হয়। বাকি সদস্যদের কোনো কার্যক্রম না থাকায় তাদের কোনো ভাগ দেওয়া হয় না।’
জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের (অতিরিক্ত সাব রেজিস্ট্রার) এম. নফিয বিন যামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা কেউ গ্রহণ করতে পারবে না। যদি কেউ অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিয়ন সেলিমের প্রাইভেটকারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কে কীভাবে অফিস করবে, সেটা তার বিষয়। এটা আসলে আমাদের কোনো বিষয় না। আর সেলিম যদি অফিস না করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসার মো. শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সেলিমের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, এটা লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে আমরা তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেব।