মাদক কারবারের সাথে দেশী ও আন্তর্জাতিক দুই ধরণের চক্র জড়িত। দেশীয় কারবারী ও মদদদাতা না থাকলে অনেক আগেই মাদক কারবার বন্ধ করা যেতো। মাদকের সঙ্গে জড়িতরা যে দলেরই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং এদের চিহ্নিত করে ধরিয়ে দিন। এই মাদক বিরোধী চ্যালেঞ্জে আমাদের জিততে হবে। শুক্রবার (২৭ মে) দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর কক্সবাজার রিজিয়ন কর্তৃক মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।
এসময় কক্সবাজারের বিজিবির প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, সীমান্তে বিজিবি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে বলে আজকে এই বিশাল অংকের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে। বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আরো গতিশীল করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোকে সর্বপ্রথম স্থানীয়দের সাহযোগীতা দরকার।
মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিবি’র অভিযানিক কার্যক্রম নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এরপর বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুস সাকিব স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বিজিবি মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে, বিজিবিকে আধুনিকায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন। সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
পরে মন্ত্রী ইয়াবা ও আইস ধ্বংস করে মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। গত এক বছরে কক্সবাজার বিজিবি রিজিওনের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে জব্দকৃত ৩৯৫ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭৫ টাকা মূল্যমানের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। তৎমধ্যে মালিকবিহীন আটককৃত ৯০,৮০,৪৭৭ পিস ইয়াবা, ২৩.৭৫২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৬,৭৬৭ ক্যান বিয়ার, ১,৩৩৯ বোতল মদ, ১৫৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২০৬ লিটার বাংলা মদ, ১৭ কেজি গাঁজা, ৪৮,০১৯ পিস বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলেট, ১০,৯৮৪ প্যাকেট বিদেশী সিগারেট এবং ৭ বোতল এ্যামোনিয়াম সালফার ধ্বংস করা হয়েছে। বিজিবির মতে, এসব মাদকের আনুমানিক মূল্য ৩৯৫,৭৬,৪৭,৫৭৫/- (তিনশত পঁচানব্বই কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত পঁচাত্তর) টাকা।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ১,৯৭৯ জন আসামিসহ ১,২৪,০০,৪৩০ পিস ইয়াবা, ২৭.৪৪৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১,৩০৫ ক্যান বিয়ার, ৯৮ বোতল মদ, ১৩৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৮৬.৮০০ লিটার চোলাই মদ, ২২.৯৯৫ কেজি গাঁজা এবং ৩.১৫০ কেজি আফিম উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবির মতে, এসব মালিকসহ জব্দকৃত মাদকের মূল্য আনুমানিক ৫১০,৯০,১৩,৫৭২ (পাঁচশত দশ কোটি নব্বই লক্ষ তের হাজার পাঁচশত বাহাত্তর) টাকা।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মো. ফখরুল আহসান, কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার রেজোয়ান হায়াত, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ পদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।