শিবপুর ইউপিতে প্রগতি’র উদ্যোগে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচী (ভিজিডি) ২০২১-২০২২ সদস্যদের জীবনমান দক্ষতা ও আয়বর্ধন মূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬/০৫/২২) সকাল ১০ টায় শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১৩১ জন ভিজিডি সুফলভোগীরা দীর্ঘদিন উপকার পেয়ে আসছে। এই ভিজিডি চাউল তাদের প্রয়োজন মাফিক পুষ্টি চাহিদা নিবারণ করছে। আগামী এই সুফলভোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে আমার সর্বাতœক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রগতি’র নির্বাহী পরিচালক আশেকী-ই-এলাহী। তিনি বলেন, আপনারা যারা ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন তারা সৌভাগ্যমান। আপনাদের মতো সমাজে দুঃস্থ মহিলা আছে। অথচ সেই সকল মহিলারা আজকের এই জীবনমান দক্ষতা ও আয়বর্ধন মূলক প্রশিক্ষক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পাচ্ছেনা। এতে মন খারাপের কিছু নেই। আজকে যারা এই কার্ড পেয়েছে। আগামী অন্যরাও একই পদ্ধতিতে কার্ড পাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ভিজিডি সুফলভোগীরা এই জীবনমান দক্ষতা ও আয়বর্ধন মূলক প্রশিক্ষক কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতার নিরীক্ষে নিজ নিজ আঙ্গিণা ও বাড়ির পার্শ্বের খালি জায়গায় প্রয়োগ করলে তাদের জীবন আগামীতে আরো উন্নততর হবে। এবং সুখী, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এই সুফলভোগীরা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভাবপর হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সাতক্ষীরার প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা জোহরা, প্রত্যেক নারীদের সঞ্চয়ী হতে হবে। এবং এই ভিজিডি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা নিজ আঙ্গিণায় প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সংকট দূর করতে হবে। এরজন্য নিয়মিত ভিজিডি ট্রেনিং এ প্রত্যেক সদস্যদের অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে মাতৃস্বাস্থ্য লোপ পাচ্ছে। এমনকি নারীদের স্বাস্থ্যহানিও ঘটছে। এরজন্য শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য সম্পর্কে সমাজের সকল শ্রেণির কিশোর-কিশোরীসহ নারীদের সচেতন করতে হবে। নারীরা আমাদের সমাজে অবহেলিত। ফলে বাল্যবিবাহের প্রকোপ পূর্বের তুলনায় জেলায় বৃদ্ধির সংবাদ পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি আমরা। ওই নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রশিক্ষণ অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আজকে যারা এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন আশাকরি তারা বাল্যবিবাহের মতো জঘণ্য কাজ থেকে বিরত থাকবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ভিজিডি প্রশিক্ষণে নারী উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখছে কৃষিক্ষেত্রে। বিশেষ করে বাড়্রি আঙ্গিণায় শাক-সবজি, ফল-মূল, তরি-তরকারি ইত্যাদি উদ্ভিদ জাতীয় গাছ লাগিয়ে নিজের পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে তা বাজারজাত করণের মাধ্যমে আর্থিক সুফলও ভোগ করছেন। এরজন্য কৃষি আইপিএন শিক্ষা গ্রহণ করে নারীরা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করছে। ফলে দেশে সরকারিভাবে কৃষিব্যবস্থায় নিয়োজিত কাজে নারীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মো. মুনসুর রহমান বলেন, আজ নারীরা পিছিয়ে। সেজন্য প্রতিটি নারীকে এমন প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি প্রশিক্ষণই শিক্ষণীয়। সেখান থেকে কিছু না কিছু শিক্ষা লাভ করা সম্ভব। আজকের এই ভিজিডি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে নারীরা বাস্তবতার নিরীক্ষে প্রয়োগ করতে পারলে শুধু সরকারের সফলতা নহে, এই কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের পরিশ্রম সার্থক ও মঙ্গলময় হয়ে উঠবে। এবং প্রগতি আরো উন্নতরভাবে সামনে এগিয়ে যাবে। সেই প্রত্যাশা। ইউপি সচিব আনিসুজ্জামান বলেন, প্রত্যেক মাসে এই ধরণের প্রশিক্ষণ প্রগতি আমাদের এই মিলনায়তনে করে থাকে। আমি সকল সময়ে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। আগামীতেও করতে চাই। তিনি আরও বলেন, ভিজিডি চাউল সুফলভোগীদের মাঝে যাতে সমানভাবে বিতরণ হয় তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ০৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আপনারা নারী, আপনারা ঘরে বসে অন্যের মুখাপেক্ষি হলে হবে না। অন্যের কাছে সাহায্য ভিক্ষা না করে নিজেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সাবলম্ভী হতে হবে। এবং নিজের পরিবারের ও সমাজের মানুষের পাশে আপনারাই একদিন আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন। এরফলে সমাজের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। এছাড়া বক্তব্যে ভিজিডি সুফলভোগী পুষ্পরানী সরকার (বাঁশতলা) বলেন, প্রগতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ভিজিডি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজে একটি গরু কিনেছি। ওই গরুর দুধ বিক্রি করে আজ আমার পরিবার স্বচ্ছল। কবিতা রানী (ডুমুরতলা) বলেন, এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাড়ির পার্শ্বে শাক-সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করে আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করেছি। এবং সমিতি থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেছি। নীলিমা খাতুন (গদাঘাটা) বলেন, এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজে হাতের কাজ শিখেছি। বাড়িতে একটি সেলাই মেশিন কিনেছি। ওই মেশিনে কাজ করে বাড়িতে বসে আয় করছি। সেই আয়ের টাকা দিয়ে এক প্রকার আমার পরিবারের জীর্বিকা নির্বাহ করি। এসময় ০২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সন্তোষ কুমার ম-ল, ০৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কাজী আবু সুলতান, সংরক্ষিত ১,২, ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার রুমা আক্তার রাত্রি, প্রগতি’র সমন্বয়কারী সুপ্রকাশ, মাসুদ হাসানসহ ভিজিডি সুফলভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। উপরিউক্ত আলোচনা শেষে ভিজিডি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষণ শেষ সুফলভোগীরা তাদের কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রগতি আয়োজিত ভিজিডি সদস্যদের জীবনমান দক্ষতা ও আয়বর্ধন মূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।