সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মফিজুর রহমান এর অপসারনের দাবীতে স্থানীয় মুসল্লিয়ানদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) জুমআর নামাজের খুৎবা শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ করে একজন মুসল্লী মসজিদের দানবাক্সের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন তার বিরুদ্ধে। পরে বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত মুসল্লীয়ানরা দুটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে মসজিদের মধ্যেই তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় মসজিদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিলেও উত্তেজিত মুসল্লীয়ানরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছেন। ঘটনার ভিডিও ফেইসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
মসজিদের মুসল্লী মো.সামসুজ্জামান তার ফেইসবুকে ঐদিনের ঘটনা পোষ্ট করেন। এতে তিনি বলেন,“মডেল মসজিদের খতিব সাহেবের তেলাওয়াতের অবস্থা নাজেহাল সুনামগঞ্জ মডেল মসজিদ। ইমামের তেলাওয়াত অস্পষ্ট,বক্তব্যের ভাষা অস্পষ্ট এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রের সমস্যার সাথে সামাজিক অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ স্বরুপ বাস্তব কোন কথা মিম্বর থেকে প্রকাশ ঘটেনি। মুসল্লী এগুলোর বাস্তবতা না পেলে অঘটন বা কান্ড ঘটবেই। আমরা এই অবস্থার থেকে পরিত্রাণ চাই। বেশিরভাগ মুসল্লীর মতাদর্শের নির্ভূল ও নিরহংকারের তালিকার উচ্চতায় তিনি নেই। অর্থাৎ বেশিরভাগ মুসল্লী উনাকে চায়না। এতে ইসলাম কি বলে ?
রোকন ইকবাল নামের একজন মুসল্লী উল্লেখ করেন,“ইমাম সাহেবকে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইমাম সাহেব আওয়ামী ওলামা লীগের মনে হয় এবং উনার চেয়ে ভালো ও যোগ্য বাদ দিয়ে উনাকে নিয়োগ দেয়ায় এইজন্য ঝামেলা”। ইরফান জুনেদ নামের আরেক মুসল্লী উল্লেখ করেন,“সাথে সাথে সেনাবাহিনীর টিমকে কল দেয়ার পর সাথে সাথে মসজিদের ভিতরে চলে আসেন সেনাবাহিনীর টিম। দুস্কৃতিকারী একজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। যারা যারা হামলা করেছে তাদের পরিচয় এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি। তবে সমস্যাটা শুরু হয়েছিলো মসজিদের সাপ্তাহিক দানকৃত টাকার হিসেবে নিয়ে। দুই গ্রæপের মধ্যে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। সেটা থেকে ঝামেলা সৃষ্টি হয়”।
এমনিভাবে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্যের দ্বারা ইমাম হাফেজ মাওলানা মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অনাস্থা জ্ঞাপন করে যাচ্ছেন মুসল্লীয়ানরা। তারপরও ইমাম সাহেব স্বীয় পদ আকড়ে ধরেছেন। এমনকি নিজের সমর্থনে লালপুর রাধানগরসহ স্বীয় এলাকার লোকজনকে ঝড়ো করে মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। জানা যায়,বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অস্থানীয় ও স্থানীয় আগ্রহীদের প্রথমে লিখিত ও পরে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন শেষে ফলাফলের অনেক পেছনে থাকার পরও সাবেক ইমাম সাহেবের ছেলে হিসেবে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর উক্ত মফিজুর রহমানকে তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা হয়। এরপর থেকে মুসল্লীয়ানরা শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামল পর্যন্ত কেউ কোন প্রতিবাদ বা ওজর আপত্তি উত্থাপন না করলেও ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর পরই প্রকাশ্যে ইমাম মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।