মৌলভীবাজারে বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্যা সামগ্রী বিতরণকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন,বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু বলতে কোনো শব্দ নেই,বাংলাদেশ আমাদের সবার। সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো পাঁতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। শনিবার ২৪ আগস্ট ২০২৪ ইং, বিকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভানুগাছ বাজারে সংক্ষিপ্ত এক পথসভায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্যা সামগ্রী বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,সম্প্রতি বন্যায় ক্ষত বিক্ষত জনপদের দু:খী ভাইবোনদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। ভারত থেকে নেমে আসা ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় মারা যাওয়া লোকদের দাফন করারও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। পানিবন্দী লোকদের কেউ কেউ টিনের চালায়ও রাত কাটিয়েছেন। এদেশ আঠারো কোটি মানুষের। এখানে কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান সেটি দেখার বিষয় নয়। সবার সমান অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই, এদেশ সকল ধর্মের মানুষের।
আরো বলেন, ছাত্র-জনতার অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে একটা পরিবর্তন হয়েছে, যারা শাহাদাত বরণ করেছেন আল্লাহ তাদেরকে কবুল করুন। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে প্রধান টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী গুম, খুনের স্বীকার হন। এতো অত্যাচারের পরও জামায়াত ইসলামী টিকে আছে পালিয়ে যায়নি। বীর কখনো পালায়না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নের রাজপথে তুলে এনেছেন, আপনারা কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাস জ্ঞানে তো কখনও দেখি নাই, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়ে এইভাবে কোনো শাসক ও দোসরদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। আপনারা পালাবেন কেন। আমাদের নেতাদের আপনারা হত্যা করেছেন, আমাদের কোনো নেতা দেশ ছেড়ে পালাননি। এটি আমাদের বাবা দাদাদের দেশ। আমাদের কোনো খালা-মাসির দেশ নেই। বাংলাদেশ আমাদের জন্ম মৃত্যুর চিরস্থায়ী ঠিকানা।
এ সময় তিনি বিডিআর বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে দিতে বিডিআর বিদ্রোহের ষড়যত্র করে দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে শেখ হাসিনা। বিডিআর এর নাম, লগু পরিবর্তন করে সীমান্তের চৌকিদার বাহিনীতে পরিনত করা হয়। ছাত্র-জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জামায়েতে আমীর বলেন, ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশ জালিম মুক্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আর কখনো জালিম সরকারকে দেখতে চায় না। জালিম কোন সরকার যেন আর ফিরে না আসে। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে একটা পরিবর্তন হয়েছে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেখানে আর কখনো যেন কোন জালিম সরকার ফিরে না আসে। ছাত্রজনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র-তরুন, যুবকদের রক্তের বিনিময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তোড়ে দেশ থেকে আওয়ামী জালিম সরকার পালিয়েছে। তোমাদের জন্য আমরা দোয়া করি।
আমির ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, চোরদের জন্য প্রতি বছরে নদীর বাঁধ ভাঙছে। কোটি কোটি টাকা বিগত সময়ে বরাদ্ধকৃত অর্থ চোরদের পকেটে চলে যাওয়ার ফলে নদী খনন হয়নি। তাই প্রতি বছর নদীর বাধ ভেঙে বন্যা হয়। আর মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে সৃষ্ট বন্যার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও দায় আছে। শুকনো মৌসুমে তারা বাঁধদিয়ে পানি আটকিয়ে রাখে আর বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়। এটা আর চলতে দেওয়া হবে না। আর্ন্তজাতিক আদালতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনে যাওয়া হবে। কারও জমিদারি চলবে না। ১৮ কোটি মানুষের দেশ সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। কোন অপশক্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবেনা। সংখ্যা গুরু সংখ্যালঘু বলে জাতিকে বিভক্ত করা যাবেনা। আমরা সকলে মিলে এ দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলব।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের লম্পট মন্ত্রী-এমপিসহ সহযোগীরা দেশে এতো কুকর্ম করেছে যে তারা এখন বন-জঙ্গলেও আশ্রয় পাচ্ছে না। এখন খালে-বিলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে তাদের অনেকের পাপের বিচার শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও আরও হবে।
উক্ত পথসভা অনুষ্ঠানে কমলগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোঃ মাসুক মিয়ার সভাপতিত্বে ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এড. ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ শাহ জাহান আলী, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, জেলা নায়েবে আমির আব্দুর রহমান, ঢাকা পল্টন থানা জামায়াতের আমির শাহীন আহমেদ খাঁন, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামির আলী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা জামায়াতের আমির মাও ইসমাইল হোসেন ও সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলাম কামরুল-সহ প্রমুখ।
পরে বন্যা দুর্গত লোকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান।