কিছু মানুষের বিবেক হঠাৎ এতো জাগ্রত হয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই ১৯৭১ এর মুক্তি যুদ্ধ করেছে অথবা তারা দেশের জন্য অনেক অবদান রেখেছে। এই সুবিধাবাদী, বিবেকবান মানুষ গুলো তারা যাদের নিজের মাথার নিচের বালিশ টা একটু বাঁকা হয়েছে শুধু এর বেশী কিছুনা। ১৭ বছরে এদের এক রুটিন ছিল। এখন এই রুটিন এর একটু ব্যত্যয় ঘটাতেই এদের ভেতরের মানবতা জেগে উঠেছে। এনারা বিবেকবান হলেও এনারা তনু, আবরার, সাগর রুনি, বিশ্বজিত এমন আরও অনেক মৃত্যুর খবর চোখের সামনে দেখে ও কোনদিন বিবেক জেগে ওঠেনি। একটা টু শব্দও করেনি। কারন এরা কেউ তাদের আত্মীয় ছিলেন না, এদের কেউই দেশ স্বাধীন করেন নি। অথচ গত ১৭ বছরে যারা নিজ বাড়ীতে ঘুমাতে পারেননি। যারা অফিসে যেয়ে আর ফেরত আসেন নি, যে শিশু প্রতিবার কলিং বেলের শব্দে তার বাবার আসার অপেক্ষা করেছে কত হাজারবার। যে নারী স্বামীর অপেক্ষায় পারিবারিক চাপে ৮ বছর পর বিয়ে করার পর স্বামী ফেরত আসে। সেই নারীর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া চেহারা দেখেননি।
১০০ বছরের জন্মবার্ষিকী তে দেশের মানুষের কোটিকোটি টাকা পানির মতো উড়িয়ে দেয়ার সময় উনারা ডিজে পার্টি উপভোগ করেছে, আলোকসজ্জা দেখেছেন, অথচ এই দেশ প্রতিনিয়ত ঋণের অতল গহবরে নিমজ্জিত।
হঠাৎ সবার শোক জেগে উঠেছে এবং সেই সাথে এই ১৭ বছরের রুটিন এর ব্যতিক্রম ভেঙ্গে উনাদের মুখের খোলস আর বিবেক জাগ্রত করে দিয়েছে।
কিছু মানুষ তো আদব কায়দার বানী নিয়ে ভাষন দিচ্ছেন। আমার নিজের কাছেই একটা প্রশ্ন, আচ্ছা আমরা কি কখনও আমাদের বাসার বয়স্ক দারোয়ান কে সালাম দিয়েছি। অথবা তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়েছি। বয়স এবং অভিঙ্গতার লেহাজ কি আমরা আসলেই করি? যদি করি তবে আমরা অফিসে কি কখনও নিজের থেকে অধিনস্ত সহকর্মী কে সালাম বা দাড়িয়ে কুশল বিনিময় করি? নাকি তারা আমাদের কে করে?
মুসলমান হলেই তাকে সালাম দিতে পারি, সে ছোট হোক বড়হোক।কিন্তু আমরা তো শুধু বড় এবং উপরস্থ মানুষকে সালাম দেই।
আমি বলছিনা ওদের ভুল নেই। আমি শুধু বলতে চাই ওদের বয়স কম, অভিজ্ঞতা কম, ওরা ভুল করবে। সেই ভুল নিয়ে মাতামাতি না করে কাজ করার সময় দেই, সুযোগ দেই, দেখি কি হয়।
আমার বিশ্বাস কোন বিবেকবান মানুষের কাছেই এই স্থাপনা ভাঙ্গচুর,জ্বালাও পোড়াও,শোক বা কারো ইতিহাস নষ্ট করার নীতি ভালো লাগবেনা।
কিন্তু লেবু বেশি চিপলে তিতা হবেই। প্রতিনিয়ত তাহাজ্জুদ আদায় করা একজন মানুষ অন্যায়ের পর অন্যায় করে যাবে সেটা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারবেনা। এটা কেমন নীতি! এতো কিছুর পরেও যারা মায়া কান্না কাঁদছে। তারা আসলেই মানুষ না নির্ঘাত জাহান্নামের ফেরেশতা।
আমরা যারা এই পরিবর্তন কে মেনে নিতে পারছিনা। এবং নতুনদের প্রতিটি কাজে ভুল ধরার জন্য মুখিয়ে থাকি। তারা আমরা কেবলই নিজের টা বুঝি, তারা কেউই শেখ মুজিব এর মতো উদার, সাহসী নই। আবার এই প্রজন্মের সারজিস, নাহিদ, আসিফ এর মতো বীর ও নই।
আমাদের পরিচয় একটাই আমরা সুবিধাবাদী এবং হিপোক্রেট। আমি নিজেও কখনো কখনো তাই। তবে অন্যের ভুল নিয়ে আর নিজের অপ্রয়োজনীয় স্বার্থ নিয়ে কখনোই অতিরিক্ত করিনা। অন্যের ক্ষতি করে নিজের জন্য কিছু করিনা। আর কিছু পাওয়ার আশায় কারো উপকার করিনা।