সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: এক বছরের ব্যবধানে আবারও সিরাজগঞ্জের সেই মোতালেবের পেট থেকে বের করা হলো তাঁতের কাজে ব্যবহ্নত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম।
গত বছর এই মোতালেবের পেট থেকে দুই দফা এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে বের করা হয়েছিল ২৩টি কলম। তখন তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন আর কখনও কলম খাবেন না।
কিন্তু কথা রাখেন নাই মোতালেব। এবার কলম তো খেয়েছেনই সাথে আরো খেয়েছেন তাঁতের কাজে ব্যবহ্নত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। এত ধারালো বস্তু কিভাবে গিলেছেন মোতালেব তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে চিকিৎসক।’
তবে চিকিৎসকের মতে পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। যে কারনে তিনি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কলম, লোহার সুচ সহ যা পাচ্ছেন গিলে খাচ্ছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে মোতালেব।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর মহল্লার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল মোতালেব। গত বছর (২০২৩) মে মাসে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কপিক করে পেটের ভেতরে বেশ কয়েকটি কলম সনাক্ত করে। মেডিকেল কলেজের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দুই দফা এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে পেটের ভেতরে একে একে বের করা হয় ২৩টি কলম। যা ছিলো রিতিমতো বিস্ময়কর। সেবার এন্ডোস্কপির সার্জারির মাধ্যমে ২৩টি কলম বের করার পর কলম না খাওয়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। তবে প্রতিজ্ঞা রাখেননি বিরল মানষিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। তবে এবার তার অবস্থা ছিলো আরো ভয়াবহ।
এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে আবারও পেটের তীব্র ব্যথা শুরু হয় মোতালেবের। মা লায়লি খাতুন আবারও নিয়ে আসেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে
আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক বুঝতে পারেন আবার মোতালেব কলম খেয়েছেন। কিন্তু এবার কলম ছাড়াও আরো ধারালো বস্তুর খোঁজ পাওয়া যায় মোতালেবের পেটে। পরবর্তীতে গত ৩ জুন সোমবার ও ৪ জুন মঙ্গলবার দুই মফায়
এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে মোতালেবের পেট থেকে তাঁতের কাজে ব্যবহ্নত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি,একটি প্লাস্টিকের বেল্ড ও একটি কলম বের করা হয়।’
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোতালেব হোসেন (৩৬) সে ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হন। এরপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কলম খেতে শুরু করে। ২০২৩ সালের গত ১৬ মে মোতালেবের পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কপিক করে পেটের ভেতরে বেশ কয়েকটি কলম সনাক্ত করে। পরে দুই দফায় তার পেটের ভিতর থেকে এন্ডোস্কপিক মাধ্যমেই
অপারেশন ছাড়াই ২৩টি কলম বের করা হয়। এক বছরের ব্যবধানে আবারও তার পিট থেকে বের করা হলো তাঁতের
কাজে ব্যবহ্নত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট এবং এন্ডোস্কপিক সার্জন, ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান ভোরের আকাশকে বলেন, মোতালেব পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। এটি একটি ব্যক্রিম রোগ। যে কারনে সে কলম কুড়িয়ে খাচ্ছে। এবার কলম তো খেয়েছেনই সাথে খেয়েছেন তাঁতের কাজে
ব্যবহ্নত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। এত ধারালো বস্তু কিভাবে গিলেছেন তা চিন্ত করাও কঠিন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে মোতালেব।
মোতালেবের মা লাইলী খাতুন ভোরের আকাশকে বলেন, সব সময় তো ওর সাথে থাকা হয়না। আবারও কলম খাই এটি জানতাম না। চুপি চুপি হয়তো খেত। গত মাসে হঠাৎ করে পেটের ব্যাথা আবারও শুরু হয়। নিয়ে আসি মনসুর আলী হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন আবারও কলম খেয়েছে মোতালেব। মোতালেবের বাবা নাই। আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ওর চিকিৎসা করার মতো সামথ্য আমার নেই। সরকারী সহায়তা পেলে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম।’