রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের দেওয়া অভিযোগপত্র বাতিল করে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ‘আসামিদের রক্ষার উদ্দেশ্য’ ওই অভিযোগপত্র দাখিল করায় পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে বলেছে আদালত।
পাশাপাশি ৮ জনকে আসামি করে নুরুল ইসলামের মেয়ের দায়ের করা এজাহার আমলে নিয়ে এ মামলা নতুন করে তদন্ত করতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নতুন একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে পিবিআইকে। গত বছর এ বিষয়ে দেওয়া এক রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়।
নুরুল ইসলামের মেয়ে, মামলার বাদী নিগার সুলতানার পক্ষে এদিন আদালতে ছিলেন আইনজীবী মো. আবুবকর সিদ্দীক ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল।
আইনজীবী বকর পরে বলেন, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মো. শামীম আক্তারের তদন্ত ও চার্জশিটটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে রায় দিয়েছে আদালত, এবং আসামিদের রক্ষা করার উদ্দশ্যে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে আদালত আদেশ দিয়েছে। এই জন্য চার্জশিটটি বাতিল করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আদালত ওই তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পিবিআইকে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে। বাদীর দায়ের করা নামসহ এজাহার গ্রহণ করে নতুন করে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে আর কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তার বলার সুযোগ নেই যে, তার কাছে আসল এজাহারটি নেই।
২০১৯ সালের ১১ জুন সকালে পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিক ফিল্ড’ নামের একটি ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের লাঁশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় এজাহার দাখিল করলেও পুলিশ তার এজাহার না নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে বলে তিনি পরে অভিযোগ করেন।
থানার কোনো তৎপরতা না দেখে নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম পুঠিয়া উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশী মামলা করেন। এই মামলার শুনানির সময় পুঠিয়া থানা নিগার সুলতানার সই করা একটি এজাহার আদালতে দাখিল করে, যাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি দেখানো হয়।
তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়। পরে নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে ‘এজাহার বদলে ফেলার’ অভিযোগ দেওয়া হয়। তারপরও পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে একই বছরের ৮ সেপ্টম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন নিগার সুলতানা।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করার পাপাশি বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করে পুঠিয়া থানার ওসি সাকিলসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেয় হাই কোর্ট। সে রায়ে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্তভার কিছু দির্দেশনাসহ পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া পুঠিয়ার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেয় আদালত। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আর পিবিআই এ মামলার তদন্তভার দেয় শামীম আক্তারকে। গত বছর এ মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবু জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। হাই কোর্ট দেখতে পায়, আদালতের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে তদন্ত করেছেন পিবিআই কর্মকর্তা।
এরপর গতবছর মার্চে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে হাই কোর্ট। এ বছর জানুয়ারিতে তদন্ত কর্মকর্তা শামীম তলবে হাজির হলে তার ব্যাখ্যা শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত।