সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলায় সরকারি জায়গা থেকে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি লুট করে নেয়ার সময় ছবি ও তথ্য সংগ্রহ কালে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের ধারা তিন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে।
এ সময় খবর পেয়ে হামলার শিকার হওয়া তিন সাংবাদিক ধর্মপাশা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি মো. ইসহাক মিয়া, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক তৃতীয়মাত্রা’র প্রতিনিধি নূর রহমান তুষার ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি মিঠু মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে থানা পুলিশ।
এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল (১৬ মার্চ শনিবার) দুপুরে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের ফুলুর গ্রামের সামনে। পরে এ ঘটনায় গতরাতেই আহত সাংবাদিক মো. ইসহাক মিয়া বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত রেখে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানিয়ে ঘটনার পর থেকেই পুরো জেলার সাংবাদিক সমাজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেইসবুকে) বইছে নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড়।
আহত সাংবাদিক ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের ফুলুর গ্রামের সামনে সরকারি জায়গা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে জমি গর্ত করে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে মাটি কেটে লুট করে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মাটি খেকো চক্র। পরে এ খবর পেয়ে গত ১৫ মার্চ শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন (ভূমি) সরেজমিনে গিয়ে এই মাটি খেকো চক্র ধারা অবৈধভাবে মাটি কাটার সত্যতা প্রমাণিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই চক্রের সদস্যদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এবং ওই জায়গা থেকে মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে ওই প্রভাবশালী মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্র চক্ররা গত শনিবারও একই স্থানে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছিলো। এমন সংবাদ পেয়ে শনিবার দুপুরে তিন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নেয়ার ছবি ও ভিডিও তুলতে গেলে ভেকু মেশিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মোমেন, হিরণ মিয়াসহ ১৫/১৬ জনের সংঘবদ্ধ একটি মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা সাংবাদিকদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। পরে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকরা বিষয়টি ইউএনও কে অবহিত করেন। এ সময় ওই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা উত্তেজিত হয় সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে শারীরিক নির্যাতন করে আহত করে।
আহত সাংবাদিকরা তাদের জীবন রক্ষার্থে একপর্যায়ে দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে বাদশাগঞ্জ বাজারের শামসুন্নাহার মার্কেটে এসে একটি অফিসে আশ্রয় নেয়। সাংবাদিকরা ওই মার্কেট আশ্রয় নেয়া কিছুক্ষণ পর ওই মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রের ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ হাতে দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাংবাদিকদের উপর আবার হামলা চালিয়ে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এবং এ সময় অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। পরে সংবাদ পেয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় শনিবার রাতই মাটি খেকো সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য উপজেলার সেলবরস ইউনিয়নের উত্তর বীর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে মোমেন মিয়া(৪২), একই গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেন এর ছেলে হুমায়ূন মিয়া(৩০),সলপ গ্রামের ইকবাল হোসেন এর ছেলে হিরন মিয়া(৩৮), মাটিকাটা গ্রামের মৃত মতলিব আলীর ছেলে বাবুল মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫জনকে আসামি করে সাংবাদিক মো.ইসহাক মিয়া বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামছুদ্দোহা বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিক বাদী হয়ে একটি মামলা হয়েছে। মামলা দায়ের পর থেকেই পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালিয়ে।