সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার কেজিরমোড় এলাকার জনতা ক্লিনিকের সামনে মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েকে উত্যাক্ত করে কলেজ ছাত্র বখাটে আজিজুল হক হৃদয় (২০) এর প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটেরা ওই মেয়ের বাবা দৈনিক মানবজমিনের চৌহালী উপজেলা প্রতিনিধি খোরশেদ আলম বাবু মীর্জাকে (৪২) মারধর করে। এ ঘটনায় পুলিশ কেজির মোড় এলাকা থেকে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া এ ঘটনায় রাতে সাংবাদিক বাবু মির্জা বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করে এনায়েতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তাররা হলো এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের মৃত ইসমাইল ভূঁইয়ার ছেলে কলেজছাত্র আজিজুল হক হৃদয় (২০), গোপীনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে নাজমুল হোসেন রোকন (২৫), খোকশাবাড়ী গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৭) ও গোপীনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে খামারগ্রাম কলেজের প্রভাষক ও এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া (৪২)।
এ বিষয়ে সাংবাদিক খোরশেদ আলম বাবু মির্জা বলেন, তার মেয়ে কেজির মোড়ের আইসিএল স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী’। স্কুলে যাওয়া আসার পথে আজিজুল হক হৃদয় প্রায়ই তাকে প্রেম নিবেদনের নামে উত্ত্যাক্ত করে থাকে। বিষয়টি তার পরিবারকে একাধিকবার বলার পরেও তার কোনো সমাধান হয়নি। তিনি জানান, ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকেলে তার মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় আজিজুল হক হৃদয় তার মেয়ের হাত ও ওরনা টেনে ধরে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। তার মেয়ে বাঁধা দিলে তাকে সড়কের পাশের একটি খোলা ছাউনি ঘরে আটকে রেখে শ্লিলতাহানীর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মেয়ের চাচা আরিফুল ইসলাম লিটন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে। এ খবর পেয়ে সাংবাদিক খোরশেদ আলম বাবু মির্জা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে এর প্রতিবাদ করেন এবং থানায় মামলা করতে উদ্বেত হন। এ সময় ঘটনাস্থালে উপস্থিত বখাটে আজিজুল হক হৃদয়ের মামা, খামারগ্রাম কলেজের প্রভাষক ও এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া ও অন্যান্যরা থানায় যেতে বাঁধা দেন। তাদের বাঁধা উপেক্ষা করে বাবু মির্জা থানায় যেতে চাইলে রাশেদ উদ্দিনের হুকুমে এজাহার নামীয় আসামিরা সাংবাদিক বাবু মির্জাকে মারধর করে। খবর পেয়ে এনায়েতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে হামলার সাথে জড়িত ও উত্ত্যাক্তকারী বখাটে ব্রাহ্মণগ্রামের মৃত ইসমাইল ভূঁইয়ার ছেলে আজিজুল হক হৃদয় (২০) সহ গোপীনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে নাজমুল হোসেন রোকন (২৫), খোকশাবাড়ী গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৭) ও গোপীনাথপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে খামারগ্রাম কলেজের প্রভাষক ও এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন (৪২)কে আটক করে। এ ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা থানায় মামলা না করে স্থানীয় ভাবে মিমাংশার প্রস্তাব দেয়। বাবু মির্জা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার সকালে খামারগ্রাম কলেজের ছাত্রদের নিয়ে এনায়েতপুর থানার সামনের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আসামীদের পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় থানা এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতর সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ বিষয়ে বাবা মির্জা আরও বলেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। ফলে তিনি তার পরিবার নিয়ে প্রাণ ভয়ে চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন।
এ বিষয়ে এরায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আহমেদ মোস্তফা খান বাচ্চু বলেন, আমরা ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে নয়, আমরা শিক্ষক রাশেদ উদ্দিনকে মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে ও ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছি।
এ বিষয়ে খামারগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ হায়দার আলী বলেন, এদিন আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম। ফলে মিছিলের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ছত্ররা মিছিলে গিয়ে থাকলে সেটা আমাদের অগোচরে গেছে। এ মিছিলের সাথে কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই।
এ বিষয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় আটকদের বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্ট চলছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’