নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সেশনটা ভালোই কেটেছিল বাংলাদেশ দলের। ২ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের ২৭তম ওভারেই দলীয় শতরান পেরিয়ে যায় লাল-সবুজেরা। এরপর প্রথম সেশনের শেষ দিকে অধিনায়ক শান্ত প্যাভিলিয়নে ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে জুটি গড়েন মমিনুল হক। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন জয়। তবে হঠাৎই হোঁচট খায় লাল-সবুজেরা। প্রথম দুই সেশনে দাপট দেখালেও তৃতীয় সেশনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ৮৬ রানে ফেরেন ওপেনার জয়। শেষ বিকেলে কিউইদের স্পিন ঘূর্ণিতে ১ উইকেট হাতে রেখে ৩১০ রান তুলে প্রথমদিন শেষ করেছে লাল-সবুজেরা।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন শান্ত। ওপেনিংয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গী হন জাকির হাসান। ওপেনিং জুটিতে তারা দারুণ শুরু এনে দেন। তবে এজাজ প্যাটেলের করা দারুণ এক বলে দলীয় ৩৯ রানে প্রথম উইকেটের পতনও হয়। তার ওভারের তৃতীয় বলে পরাস্ত হন জাকির। এতে মাত্র ১২ রানেই শেষ হয় এই ওপেনারের ইনিংস।
এরপর ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাবে খেলতে থাকেন অভিষিক্ত অধিনায়ক। সোধি, প্যাটেলদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটাই খেলেন তিনি। জয়ও তাকে দারুণ সঙ্গ দেন।
এই জুটিতেই রানের চাকা সচল থাকে। তবে লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগমুহূর্তে প্রথম ইনিংসে নিজের শেষটা রচনা করে ফেলেন শান্ত। গ্লেন ফিলিপসের ফুল টস ডেলিভারিতে অতি আগ্রাসী শট খেলতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। মিড-অনে ক্যাচ তালুবন্দি করেন কেন উইলিয়ামসন। ফলে ৩৫ বলে ৩৭ রান করেই শেষ হয় শান্তর ইনিংস।
শান্তকে হারানোর আক্ষেপ নিয়েই মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় টিম টাইগার্স। এরপর দ্বিতীয় সেশনেও বেশ সাবধানী মেজাজে রানের চাকা সচল রাখেন ডানহাতি ওপেনার জয়। একেবারে টেস্ট মেজাজে খেলে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়। ৯টি চারের সাহায্যে ক্যারিয়ারের চতুর্থ পঞ্চাশ ছুঁতে তাকে ৯৩ বল খেলেন তিনি।
এই জুটিতে ভর করে বড় সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে দলীয় ১৮০ রানের মাথায় গ্লেন ফিলিপসের বলে কট-বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন মমিনুল। আউট হওয়ার আগে ৭৮ বলে খেলেন ৩৭ রানের ইনিংস।
অন্যদিকে ফিফটির পর ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় শতকের দিকে এগোচ্ছিলেন জয়। তবে তিনিও ফেরেন পরের ওভারেই। ইশ সোধির বলে স্লিপে ড্যারিল মিচেলের মুঠোবন্দী হন তিনি।
৫ বলের ব্যবধানে জোড়া উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাক-ফুটে চলে যায় স্বাগতিকেরা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার গুরুদায়িত্ব ছিল অভিজ্ঞ মিডল-অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের ওপর। কিন্তু সেটা না করে উল্টো বিপদ বাড়িয়েছেন অভিজ্ঞ এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
চা বিরতি থেকে ফিরেই উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন মুশি। প্যাটেলের ফুলার লেংথের ডেলিভারি লং-অফে থাকা ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে মেরেছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় উল্টো বিপদ বাড়ে লাল-সবুজ শিবিরের। উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় মুশফিককে। এতে মাত্র ১২ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এরপর মির্ডল-অর্ডারে নেমে মেহেদি হাসান মিরাজও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। মুশির ফেরার পর চাপ সামলানোর চেষ্টা করে তিনিও ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যক্তিগত ২০ রানে কাইল জেমিসনের বলে মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
মিরাজ ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দিপুও। ২৪ রান করে ফেরেন তিনি।
শান্ত, মুমিনুল এবং দিপুর পর নুরুল হাসান সোহানকেও শেষ বিকেলে ফিরিয়েছিলেন ডানহাতি অফ-স্পিনার ফিলিপস। তার লেগ-স্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি গ্ল্যান্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২৯ রানে ফেরেন সোহান।
এরপর ব্যাট হাতে নেমে বেশ ভালোই ব্যাটিং করছিলেন নাঈম হাসান। তবে তিন চারে ১৬ রানে নাঈমকে ফেরান জেমিসন।
প্রথমদিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অল-আউট না হওয়া। শেষ উইকেট জুটিতে ২০ রান যোগ করে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন তাইজুল ও শরিফুল।
প্রথমদিন শেষে ৯ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩১০ রান। কিউইদের হয়ে চার উইকেট নিয়েছেন ফিলিপস।