এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড মোহাম্মদ শামির। প্রথম চার ম্যাচে সুযোগ না পেয়েও সাতটি ম্যাচ খেলে ২৪টি উইকেট নেন এই ভারতীয় বোলার। বিশ্বকাপের এমন পারফরমেন্সের পর আলোচনায় উঠে এসেছেন ভারতীয় এই পেস তারকা। পশ্চিমবঙ্গের পেসারকে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। তবে তার ক্রিকেটে উঠে আসার গল্পতে ভারতের ক্রিকেটের কলঙ্ক উঠে এসেছে, এমনটায় জানায় ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হলেও ক্লাব ক্রিকেট খেলার জন্য শামি বেছে নিয়েছিলেন কলকাতা ময়দানকে। পশ্চিমবঙ্গের হয়েই খেলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। খেলার জন্য বছরের একটা বড় সময় থাকেন কলকাতাতেই। কলকাতার ময়দান, ইডেন গার্ডেন্স সব কিছুই তার হাতের তালুর মতো চেনা। উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটার তৈরি হয় না, এমন নয়। মোহাম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না, কুলদীপ যাদব, পীযূষ চাওলা, প্রবীণ কুমার, ভুবনেশ্বর কুমার গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের বহু ক্রিকেটার দেশের হয়ে খেলেছেন।
উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় পেস তারকা শামি। পশ্চিমবঙ্গের পেসার বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের ট্রায়ালে দুই বছর অংশ নিয়েছিলাম। প্রথমবার শুরুতে সব কিছুই ঠিক থাকত। সব কিছু ভালোই মনে হত। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ড এলেই উত্তরপ্রেদেশের লোকেরা আমাকে লাথি মেরে বাইরে বের করে দিত। আমাকে বলা হত, এখানে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই।’
এরপর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বলেন, ‘পরের বছরও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ১ হাজার ৬০০ ছেলে এসেছিল ট্রায়ালে। তিন দিনে সবাইকে দেখে রঞ্জি ট্রফির দল তৈরি করার কথা ছিল। সেবার আমার সাথে বড় ভাইও ছিলেন। প্রধান কর্মকর্তাদের একজনের সাথে কথাও বলেছিলেন তিনি। আমার বড় ভাইকে ওই কর্মকর্তা এমন একটি কথা বলেছিলেন, যা আমরা জীবনে কখনো ভাবতে পারি না। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমার চেয়ার নাড়িয়ে দিতে পারে, তাহলে তোমার ভাই সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। না হলে সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত।’
শামি তার ভাইয়ের কথা নিয়ে বলেন, ‘আমার ভাই আপনার চেয়ার নাড়াতে তো পারবেই, দরকার হলে আপনার চেয়ার উল্টেও দিতে পারে। ওর গায়ে এতটাই শক্তি আছে। কিন্তু আমি চাই না এভাবে ভাই সুযোগ পাক। ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সুযোগ পেলেই খুশি হব।’ তাতে ওই কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘তাহলে তোমার ভাইয়ের জায়গা নেই এখানে। প্রতিভা দিয়ে এখানে কিছু হয় না।’ ভাইও মুখের ওপর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তাহলে আমার ভাই কোনো দিন উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলবে না।’
শামি এরপর ত্রিপুরা প্রদেশের দলেও ট্রায়াল দেন। কিন্তু সেখানে সুযোগ না পেয়ে কলকাতার এক ক্লাবে ট্রায়াল দেন। সেখানে তাঁকে বিনা বেতনে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি বদলাতে খুব বেশি সময় নেননি শামি, ‘ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমে ৯ ম্যাচে ৪৫ উইকেট পাই। এরপর ম্যানেজার ২৫ হাজার রুপি আর একটা ট্রেনের টিকিট দেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। বাড়ি গিয়ে টাকাটা মাকে দিয়ে দেই। কিন্তু বাবা সেটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা তোমার টাকা, তোমার উচিত তা খরচ করা।’
এবার বিশ্বকাপে সাফল্যের পর অবশ্য উত্তরপ্রদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন তিনি। তার গ্রামে একটা ছোট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর শামিকে বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।