পুলিশ সুপার অনুষ্ঠানের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও জাতির পিতার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার সকলকে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সাথে ।
তিনি বলেন,”পুলিশ সুপার পদটি আমি জেলা পুলিশের প্রধান হিসেবে নয়, বরং আমি গ্রহণ করেছি রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত সুমহান দায়িত্ব হিসেবে। চুয়াডাঙ্গার জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে জেলা পুলিশ সদস্যদের অবারিত চেষ্টা চলমান; সেই বিশাল কর্মক্ষেত্রের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি এবং আমাকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি অশষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, স্মরণ করছি আমাদের মা বোনদের, যারা মুক্তিযুদ্ধে তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। একই সাথে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ করা বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের প্রতিও সম্মান জানাতে চাই যারা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে থ্রি নট থ্রি রাইফলে দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়েছিল। সশ্রদ্ধচিত্তে অভিবাদন জানাতে চাই সেই সকল পুলিশ সদস্যদের যারা জনগণের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।”
পুলিশ সুপার আরও বলেন,”বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে কর্মরত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণ সর্বপ্রথম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্যুখ সমরে লিপ্ত হন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহব্বানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহিদ ও ০২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ১১(এগার)টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আট নম্বর সেক্টরের অন্তর্গত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলার গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। আমরা সকলে অবগত আছি যে, ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী স্থাপিত হয়। পাক হানাদার বাহিনী চুয়াডাঙ্গার অস্থায়ী রাজধানীর সংবাদ পেয়ে গেলে নিরাপত্তার খাতিরে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী স্থানান্তর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা ০৮(আট) নম্বর সেক্টরের আওতাধীন ছিল। যুদ্ধের প্রথম ০৬(ছয়) মাস সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু উসমান চৌধুরী এবং পরবর্তী ০৩(তিন) মাস মেজর মনজুর। যতটা জানতে পেরেছি চুয়াডাঙ্গা জেলার মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২২৬৫ জন। তার মধ্যে আনুমানিক ১৬০০ জন জীবিত আছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৮ জন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অপরিসীম ভূমিকা রাখা গৌরবময় এই জনপদের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করতে পারা অত্যন্ত গৌরবের এবং সৌভাগ্যের একটি বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা, বীরত্ব,আত্মত্যাগের ইতিহাসকে ধারণ করে সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে আমি এবং আমার টিম আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আমার চাকরির অভিজ্ঞতা, মেধা এবং প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে সচষ্টে থাকব। আপনাদের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং নির্বাচন আচরণ বিধিমালা মোতাবেক পুলিশের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে বদ্ধপরিকর। “
মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন তাঁরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কাজ করতে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার সকলের আর্শীবাদ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
উক্ত মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ); জাকিয়া সুলতানা, সহকারি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল), চুয়াডাঙ্গা; আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, ডিআইও-১, ডিএসবি; মাহাব্বুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, সদর থানা, চুয়াডাঙ্গাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারগন।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আনিসুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল), চুয়াডাঙ্গা।