সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌসুম জুড়ে সিরাজগঞ্জের বাগবাটিতে জলপাইয়ের হাট সরগরম থাকে। প্রতিদিন এই হাটে গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার জলপাই কেনাবেচা হচ্ছে। বাগান থেকে জলপাই সংগ্রহ করে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করে জীবিকা চলছে এলাকার শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিদের।
এদিকে, সদর উপজেলার বাগবাটি জলপাই হাটের আমদানি করা জলপাই চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। মান ও গুনের কারণে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছে চাষিরা। চাহিদা এবং লাভজনক হবার কারণে প্রতি বছর জলপাই বাগানের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর’) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে জলপাই ক্রয় করছে। সেই জলপাইগুলো কেউ পানি দিয়ে পরিস্কার করছে কেউ বস্তায় ভরে ট্রাকে তুলছেন।
জানা যায়, মৌসুম আসার আগেই বাগান মালিকদের জামানত দিয়ে বাগান কিনে নেয় বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। ফল পরিপক্ব হলে বাগান থেকে ফল তুলে নিয়ে যায় আড়তে। ফলে কোনো বিড়ম্বনাই থাকছে না এলাকার চাষি-ব্যবসায়ীদের মধ্যে। প্রতি কেজি জলপাই প্রকারভেদে ১৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হাটে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার জলপাই কেনাবেচা হয় বলে জানান স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা।
হাটে জলপাই বিক্রি করতে আসা উপজেলার ঘোড়াচরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছ বিক্রি থেকে একদিন দুই মণ করে জলপাই এ হাটে এনে বিক্রি করি। প্রতিদিন জলপাই হাট ছাড়াও রবি ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক এই হাট বসে।
ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী বলেন, এ মৌসুমে ২০ জন মিলে প্রায় ২৫ লাখ টাকার জলপাই বাগান কিনেছি। পরিবেশ ভালো থাকলে বাগান থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার জলপাই বিক্রির আশা করছি।
আমিনপুর গ্রামের জলপাই বাগানের মালিক আব্দুল হান্নান বলেন, হাটে গড়ে প্রতিদিন ৪-৫ লাখ টাকার জলপাই বিক্রি হয়। প্রকারভেদে প্রতি কেজি জলপাইয়ের দাম থাকে ১৫ থেকে ৩৫ টাকা। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ টন জলপাই বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় চর-খাতা গ্রামের শামমুল হক জানান, বাগবাটি ইউপিতে জলপাইয়ের ছোট-বড় অনেক বাগান রয়েছে। আরও নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠছে। জলপাইয়ের ভালো দাম পাওয়ার কারণে চাষিদের মধ্যে বাগান করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে’।
বাগবাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই এলাকার জলপাইয়ের আকার ও স্বাদে ভালো হওয়ার কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক। এ হাটে জলপাই বিক্রি হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত’।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, জলপাইয়ের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এবছর সদর উপজেলাতে ৩১ হেক্টর জমিতে জলপাই চাষবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৯১০ মেট্রিক টন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, অর্থকারী ফসলের পাশাপাশি পেয়ারা, মাল্টা, কমলা, জাম্বুরা এবং জলপাই চাষে আশাতীত সাফল্য থাকায় চাষিদের এসব ফল চাষে কৃষি বিভাগের তদারকি বাড়ানো হয়েছে।