ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ায় গত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এতে সুস্বাদু এ মাছটির দামও সহনীয় বলে দাবি করলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
এছাড়া ভারতের তুলনায় দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি বলেও মনে করেন না মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমাদের কোনো ব্যর্থতা আছে বলে মনে করি না।’
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় কেউ যাতে ইলিশ আহরণ করতে না পারে, সেজন্য জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ চালানো হবে বলে জানান মন্ত্রী।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বেড়েছে। বিগত ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন উদ্বেগজনকভাবে কমে ১.৯৯ লাখ মেট্রিক টনে পরিণত হয়েছিল।
‘পরে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বেড়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময় নির্ধারণ করেছে সরকার। এ ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মুজত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ সময় কর্মকর্তারা জল, স্থল ও আকাশপথে পর্যবেক্ষণ করবেন জানিয়ে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আইন মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর পাশাপাশি মামলা দেয়া হবে। বিভিন্ন মোহনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবেন, তাদের ভিজিএফ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আওতায় ২ হাজার ৬২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ১০ হাজার ৮২১টি অভিযান পরিচালনা করে ৩১.৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ও ৯১৯.৮৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে। এছাড়া, ২ হাজার ৯০৮টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ৪৭.৩২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জব্দ করা মালামাল নিলামে বিক্রি করে ২২.১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় গত বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকরণের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গতবছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদিত হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ জলাশয়ে যুক্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ এখন শুধু আমাদের জাতীয় সম্পদই নয়, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দুর্গাপূজায় সীমিত পরিসরে ইলিশ রফতানি হয়ে থাকে। যা প্রতিবেশী দেশের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে এবং দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানির অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে গত ১০ অক্টোবর ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে, যা থেকে আয় হয়েছে ৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
ভারতে প্রতি কেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ১১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও দেশের বাজারে দাম বেশি। ইলিশের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া যায় কি না – এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেখানে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমাদের কোনো ব্যর্থতা আছে বলে মনে করি না।’
বিগত চার বছরে পাশের দেশ ভারতে ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ ইলিশ রফতানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।