সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজীজী সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দু‘পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫জন আহত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে গিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজ গ্রুপের সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হ্নদয় মিয়া(২৫) ও হলুদ মিয়া(২২)’কে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও বলেন, থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই। আমি এই থানায় আসার পর সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এবং চোরাচালান প্রতিরোধ পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা-জঙ্গলবাড়ি সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানকারী ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ওই দুই গ্রুপের লোকজন আবারও সংঘর্ষের জড়ানোর আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
গতকাল রবিবার (৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২ টার সময় তাহিরপুর উপজেলা বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা-জঙ্গলবাড়ি সীমান্ত এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কয়লা চোরাচালানের করতে গিয়ে এ পর্যন্ত শতাধিক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। ভারত থেকে চোরাই পথে কয়লা আনতে গিয়ে গত (আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর) দুই মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তাড়া খেয়ে পানিতে ডুবে ও চোরাই কয়লার গুহায় মাটি ও পাথর চাপায় তিন বাংলাদেশী কয়লা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- ভারতীয় চোরাই কয়লা ও মাদকসহ পাথর, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, গাছ, কসমেটিস, চিনি, সুপারীসহ বিভিন্ন পন্য সামগ্রী পাচারের স্বর্গরাজ্য তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা, বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা ও লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদবাদ, পুরান লাউড় সীমান্ত। চোরাকারবারিরা এইসব সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিদিন ভারতীয় চোরাই কয়লা ও মদ- ইয়াবাসহ প্রায় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বৈধ কয়লার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আরও জানান, প্রতিদিনের মতো গতকাল রবিবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টার পর থেকে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্রটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে উপজেলার বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা, বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, বরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া, বারেকটিলা ও লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদবাদ, পুরান লাউড় সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই কয়লা,মাদকসহ বিভিন্ন পাচাঁর শুরু করে।
পরে রাত সাড়ে ১১ টাত সময় সীমান্তের বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকের সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য ইয়াবা কালাম মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, মোক্তার মহলদার, নেকবর আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, লেংড়া জামাল, রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, হযরত আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, রুবেল মিয়া, খোকন মিয়া, রুস্তম মিয়া, মনতাজ মিয়া, আক্কাছ মিয়া, আবু বক্কর, রফিকুল, বায়েজিদ মিয়াগংরা
চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে আনা প্রতি বস্তা কয়লার জন্য ৩৫০ টাকা করে চাঁদা দাবি করে।
এমতাবস্থায় রাত অনুমান সাড়ে ১১টার সময় কলাগাঁও মাইজহাটি-লামাকাটা এলাকায় সোর্স রফ মিয়া, রফ মিয়া ও চোরাই কয়লার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাঁদা উত্তোলন নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় রফ মিয়ার পক্ষে শামীম মিয়া ও সৌরভ মিয়াগং দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী হ্নদয় মিয়া (২৫) ও হলুদ মিয়া (২২)কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের রক্ষা করতে এসে আরো ৩ জন আহত হয়। এঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রাতেই গুরুতর আহত ২জনকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু আহতদের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাদেরকে সুনামগঞ্জ পাঠানো হয়।
এব্যাপারে আহত হ্নদয়ের বাবা সিদ্দিক মিয়া বলেন- সবাইকে আমি চিনতে পারিনি। সোর্স রফ মিয়া, শামীম ও সৌরভকে চিনতে পেরেছি। তাদের সাথে আরো অনেকেই ছিল। তারা সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নামে চাঁদার জন্য ওরা আমার ছেলের ওপর হামলা করেছে, বতর্মানে তার অবস্থা খুবই খারাপ। চোরাচালান মামলার আসামী সোর্স রফ মিয়া বলেন- আপনাদের বড় সাংবাদিক ভাই ও থানাসহ সবার টাকা তুলার দায়িত্ব এতদিন পালন করেছি। এখন আস্তে আস্তে সব বাদ দিয়ে দিতেছি। তবে সংঘর্ষের সময় আমি ছিলাম না। খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গেছি। এলাকার মানুষ আমার বিরুদ্ধে নানান কিছু বলতেই পারে।
কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক রাশিদ মেম্মার ও আবুল বাশার নয়ন বলেন- চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা এখানে নতুন না। এইসব চোরাচালান ও চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের প্রধান এলাকার বড় সাংবাদিক খ্যাত একজন। তার ব্যাপারেও প্রশাসনকে জানানোর পরও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়না।