1. admin@crimenews24.net : cn24 :
  2. zpsakib@gmail.com : cnews24 :
শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
মৌলভীবাজারে সোনার বাংলা আদর্শ ক্লাবের মেধা যাচাই প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সমাবেশ করে মিথ্যাচার করাই হাইব্রিডদের কাজ বিএনপি নেতা রমজান আলী সরকার জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  পুরাতন সাতক্ষীরা মোড়ে গণআন্দোলন জোটের পথসভা মৌলভীবাজারে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রী চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত  মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার’র সাথে সাংবাদিকদের  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  সিরাজগঞ্জ বেলকুচিতে বেসরকারি ৩ ক্লিনিকের দুই লাখ টাকা জরিমানা  আলমডাঙ্গায়  সংবাদ সম্মেলন করেছে ফিড ব্যাবসায়ী বাবুলার রহমান নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে তরুণদের র‍্যালি, মানববন্ধন তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিল: নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২৫৪ বার নিউজটি পড়া হয়েছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের চান্দাইকোনায় জনবসতি এলাকা ও তিন ফসলী জমিতে গড়ে উঠা বিস্মিল্লাহ নামে অটো রাইস মিল স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াসহ আইনগত ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এদিকে, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চান্দাইকোনা এলাকায় ৬৭ শতক ফসলি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিল স্থাপনের কাজ চলছে। এই চালকলটি চালু হলে মিলের বর্জ্যে ফসলি জমিসহ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। চালকলের ধোঁয়া ও ছাইয়ে বয়স্ক ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একারণে মিলটি বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়দের পক্ষে এস.এম সোহাগ নামের এক স্থানীয় কৃষক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চান্দাইকোনা বাজারের পাশে জনবসতি এলাকায় পরিবেশ আইন ও নিয়মনীতি না মেনে তিন ফসলি জমিতে রিয়া নামে অটো মিল গড়ে তোলা হয়েছে। এই অটো মিলের অন্তরালে আনোরুল ইসলাম গংরা বিস্মিল্লাহ (অটো রাইস মিল) নামে আরেকটি মিল স্থাপন করছে। এ মিলটি চালু হলে এর বর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি কালো ধোঁয়ার সাথে মিশে বাতাসে ছাই উড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পল্লীবিদ্যুৎ সাব-অফিসসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে। একই সঙ্গে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারনের চরম দুভোগ পোহাতে হবে। সেই সাথে নষ্ট হবে তিন ফসলি জমি। একই সঙ্গে নষ্ট হবে জমিতে থাকা ঘর-বাড়ি, গাছপালা। একারনে অপিরিকল্পিত ভাবে দুটি অটো রাইস মিল বন্ধসহ আইনগত ব্যবস্থার জোড়দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জমির মালিক রঞ্জন আকন্দ, আবু ওহেদ সরকার সোহেল, তৌহিদুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন আকন্দ, জহুরুল ইসলাম আকন্দ, মামুন আকন্দ, আবু হাসেম, দুলাল শেখসহ বেশ কয়েকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০টি চালকল রয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র দুটির। বাকি চালকল ও অটো রাইস মিল অবাধে ভাবে চলছে। এতে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক অঞ্চলে স্থাপনের কারণে পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি অধিকাংশ চালকল। পরিবেশের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়াই দাপটের সঙ্গে চলছে এসব রাইস মিল। এসকল রাইস মিলগুলো পরিবেশের নিয়মনীতি মেনে স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে কারখানার দুষিত পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে আবাদি জমি ও নদী দূষণ হচ্ছে।

উপজেলার চান্দাইকোলা ইউনিয়নের মৃত কায়ছার আলী সরকারের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও মৃত রস্তম আলী সরকারের ছেলে আব্দুর রউফ সরকারসহ প্রভাবশালী ১৫ জন একত্র হয়ে অনুমতি ছাড়াই বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিল তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর’) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়ে রিয়া অটোরাইস মিলটি। চালকলটির চারপাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। চালকলের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, শ্রমিকেরা কাজ করছেন। শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই নেই। তাঁদের মুখমন্ডলে কালো ছাইয়ের আস্তর পড়ে আছে। চালকলটিতে নেই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা। তাই চালকলের সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাশের জমিগুলোতে। চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।

চান্দাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা হাসান সরকার (৫০) বলেন, মিলের কাছাকাছি ১০ মিনিট দাঁড়ানো যায় না। ছাই উড়তে থাকে পুরো এলাকায়। গাছপালার পাতা কালো হয়ে গেছে। গাছে নতুন করে কোনো ফল ধরে না। এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। বিসমিল্লাহ মিলের ছাই উড়ে আমাদের খাবারের ভিতরে পড়ে সেই খাবার নষ্ট হয়। কিন্তু একই এলাকায় আরেকটি বিস্মিল্লাহ নামে বড় অটো রাইস মিল তৈরী হচ্ছে। এই মিলটি চালু হলে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

একই গ্রামের মৃত কামাল সেখের ছেলে রাজ্জাক শেখ (৫৫) বলেন, রিয়া রাইস মিলের কারণে বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া ঘরের হাঁড়ি-পাতিলে গিয়ে পড়ে। বাড়ি ঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি ছাইয়ের আবরণে কালো বর্ণের হয়ে গেছে। মিলের কারণে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ চোখের বিভিন্ন রোগসহ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মিলের পাশে মুদি দোকানদার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও বিভিন্ন গাড়ি চালকদের চোখে পড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এতে অনেক সময় রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে।’

জানতে চাইলে রিয়া অটো রাইস মিলের মালিক আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘অটো রাইস মিল চালালে কিছু ক্ষতি হবে, আবার উপকারও হবে। এখানে সব নিয়ম মেনেই মিলটি করা হয়েছে। সবকিছুর অনুমোদন আছে আমাদের। তবে মিলের কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো দ্রুত নিরসন করবেন বলে তিনি জানান।

বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিলের পাটর্নার বাবু সরকার বলেন, আমাদের কোন কাগজপত্র নেই। নির্মাণ কাজ শেষ হলে কাগজপত্র তৈরী করে সকল দপ্তরে আবেদন জমা দেওয়া হবে।

এবিষয়ে চান্দাইকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান সরকার অভিযোগ করে বলেন, স্কুল খোলার সাথে সাথে কালো ধোঁয়ায় স্কুলের আশপাশে অন্দকার হয়ে বাতাস দুষিত করে। এছাড়া অন্যান্য কারণে চরম দুর্গন্ধ হয়। এতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে’।

মিলের পাশে অবস্থিত চান্দাইকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান জানান, এ সমস্ত মিলের কারণে বায়ূ দুষিত হচ্ছে। এর ফলে ভোর থেকে সব সময় চাতালে ছাই বাতাসে উড়ে স্কুলে এসে পড়ে। এতে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুঁইয়াগাঁতী জোনাল অফিসের (ডিজিএম’) ছোলাইমান হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ওই মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। তবে এক মিলের লাইন কৌশলে মালিক পক্ষ যদি অন্য মিলে নিতে চাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কণা মন্ডল জানান, ওই রাইস মিলের ব্যাপারে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ করেছে। এ সমস্যা দূর করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত মিলটি চালু করা যাবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি’) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অটো রাইস মিল ও ইটভাটার ধোঁয়া ও ছাই পরিবেশ ও ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রায়গঞ্জ উপজেলায় এর প্রভাব বেশি পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ ও খাদ্য অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক আব্দুর গফুর জানান, উপজেলায় কয়েকটি অটো রাইস মিলের ছাড়পত্র আছে। তবে যাঁরা ছাড়পত্র নিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই নবায়ন করছেন না।

তিনি আরও বলেন, এক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের লাইন দিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তবে এধরনের কাজ হলে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করে লাইন বিচ্ছিন্ন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এবং নিয়মনীতির বাইরে কোন অটো বা চাতাল মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। যাদের দিয়েছে ইতোমধ্যে দুই একজনকে আমরা শো-কোজ করেছি। তবে লাইসেন্স বা মিল বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটি খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে’।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আবু আশরাফ মোঃ ছালেহ্ বলেন, এক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ অন্য প্রতিষ্ঠানের নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। যদি রিয়া ও বিস্মিল্লাহ অটো রাইস মিলের মালিক গংরা এই ধরণের কাজ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কাজের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোন লোক জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আবু আশরাফ মোঃ ছালেহ্ জানান।

জেলা খাদ্র নিয়ন্ত্রক এস.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৫০টি চাল কল আছে। তাদের মধ্যে ২টি চাল কলের অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলো অবৈধ। তিনি আরো বলেন, বিস্সিল্লাহ ও রিয়া অটো রাইস মিলের কোন অনুমোদন নেই। ফসলী ফমিতে যদি কেউ অটো রাইস মিল স্থাপন করে তা

দের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2022 crimenews24.net
Design & Developed By : Anamul Rasel