চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে মাঝে মধ্যেই চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ শোনা যায়। কখনও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনায় আসেন আবার কখনও বা পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে বিভিন্ন ঝামেলায় খবরের শিরোনামে থাকেন এই নায়ক। বলা যায়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই প্রযোজকদের।
জানা গেছে, শুটিং শেষ না হওয়ায় আটকে আছে শাকিব খান অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা। এসব সিনেমার ২০ থেকে ৮৫ ভাগ শুটিং শেষ। কিন্তু শাকিব খান শিডিউল না দেওয়ায় বাকি কাজ শেষ করা যায়নি। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন প্রযোজকেরা। তাই প্রযোজক-পরিচালকের কেউ কেউ এই ক্ষতির জন্য শাকিবকেই দায়ী করেছেন। এমনকি বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়ে প্রযোজকদের অনেকেই মামলা করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
এবার শাকিবের বিরুদ্ধে খেপেছেন প্রযোজক মনিরুজ্জমান। শুধু তাই নয়, প্রয়োজন হলে নায়কের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। শিডিউল না পাওয়ায় অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে তার সিনেমা। পাশাপাশি বড় লোকসানের মুখেও পড়েছেন। আর এই ক্ষতির জন্য পুরোপুরি দায়ী করেছেন শাকিবকে।
২০১৪ সালে শাকিব-অপুকে নিয়ে ‘মাই ডার্লিং’ ছবিটির শুটিং শুরু করেন নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর। সিনেমার ৭০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পরেই আটকে যায়। কোনোভাবেই নায়কের শিডিউল পাওয়া যাচ্ছিল না। তত দিনে প্রযোজকের কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শাকিব শিডিউল দেননি।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে মনিরুজ্জমান বলেন, যদি তিন সমিতির নেতারা দুজনকে ডেকে শুটিংয়ের শিডিউলের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে তো ভালো। কিন্তু কোনো উত্তর না পেলে মামলা করব। সে সময় সমিতির নেতারা সুবিচারের আশ্বাস দিলেও পাঁচ বছর কেটে গেলেও এখনও সুরাহা হয়নি বিষয়টির।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৮ সালে যখন সমিতিগুলোর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম, তখনই বলেছিলাম সমিতি মীমাংসা করে না দিলে বিষয়টি নিয়ে শাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। ওই সময় অপু বিশ্বাস শিডিউল দিলেও শাকিব দেননি। সে সময় শাকিব খান নায়িকা পরিবর্তন করে অন্য নায়িকা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনকি বুবলীকেও নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু নায়িকা পরিবর্তন করা বা আলাদা করে শট নেওয়া সম্ভব ছিল না। নায়িকা পরিবর্তন করলে সব ফুটেজ ফেলে দিয়ে নতুন করে পুরো শুটিংই করতে হতো। এতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হতো। তাই শুটিংয়ের জন্য শিডিউল দেননি শাকিব।
মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ভুল হয়েছে ২০১৮ সালেই মামলাটা করা উচিত ছিল। আদালতে গেলে আমি ন্যায়বিচার পেতাম। শাকিবের তখন পারিশ্রমিক ১৫ লাখ টাকা ছিল। শুটিংয়ের আগে এক চেকেই পুরো টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু শুটিং শেষ করে দেওয়ার কথা বলে চুক্তির বাইরেও আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। আমি পাঁচ লাখ টাকা দিয়েই ছিলাম তাকে। এরপরও শাকিব খান শিডিউলতো দেননি। সেই পাঁচ লাখ টাকা ফেরতও দেননি।
শাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করার ইঙ্গিত দিয়ে এই প্রযোজক বলেন, আমার কষ্টের কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। আমার কাছে লিখিত সব ডকুমেন্টস আছে। ‘শাকিব এখন শিডিউল না দিলে মামলা করব আমি। সেই সঙ্গে বাড়তি দেওয়া পাঁচ লাখ টাকাও আমাকে ফেরত দিতে হবে শাকিবকে।
একইভাবে আটকে আছে নজরুল ইসলাম খানের ‘স্বপ্নের বিদেশ’। ২০০৯ প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয় সিনেমাটির। গল্পের প্রয়োজনে শাকিবকে নিয়ে বাকি দৃশ্যগুলো বরফের মধ্যে শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু বড় বাজেটের কারণে দেশের বাইরে গিয়ে বরফের মধ্যে সম্ভব হচ্ছিল না। আর শাকিবও জানিয়ে দেন বরফের মধ্যে শুটিং না করলে শিডিউল দেবেন না। ১৫ বছর ধরে এভাবেই আটকে আছে ছবিটি। আর মাত্র ১৫ ভাগ কাজ শুটিং করা গেলেই ছবির কাজ শেষ হয়ে যেত। শাকিব ওই সময় বলেছিলেন বরফ ছাড়া তিনি শুটিং করবেন না, শিডিউল দেবেন না।
শিডিউল না পাওয়ায় শাকিব অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এতে বড় লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রযোজকদের। এ দিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করলেও ফোনে পাওয়া যায়নি শাকিবকে।