সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার খামখেয়ালীপনা ও দাপ্তরিক কাজে অব্যবস্থাপনার কারণে গোটা ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ’র কার্যক্রম আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। সড়ক বিভাগ তেজগাঁও ঢাকার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু ঠিকাদার/ কন্সট্রাকশন কোম্পানীর সখ্যতা ইতিমধ্যে নানাবিধ প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
এমনই একটি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ABAID MONSUR CONSTRUCTION (আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন) এর (Completion Certificate) বা সমাপনী সনদ সমূহ সড়ক বিভাগ হতে ইস্যূ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা সত্বেও তাঁরা বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কয়েকটি স্থানে কার্যক্রম কিছুদিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে। এ কন্সট্রাকশন কোম্পানীটি ঐ অসম্পন্ন কাগজপত্র দিয়েই নিয়মিত ই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করছে বলেও গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে তাঁদের ৫৬ খানা Completion Certificate (সমাপনি সনদ) ইস্যূ করা না হলেও তাঁরা কিভাবে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে একর পর এক কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে তা ভেবে সচেতন মহল শংকিত।
তাছাড়া ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর পক্ষে তার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ই-টেন্ডারে অংশগ্রহণে বাধাপ্রদান সহ নানাবিধ ভয়ভিতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়মানুযায়ী কমপক্ষে ৩ বা ৩ এর অধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক থাকার পরও সড়ক ভবনের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় তারা ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর নাটকীয়ভাবে প্রমান করছেন যে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে যে, কোন কোন ক্ষেত্রে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে বলে নিশ্চিত করা হচ্ছে, তা মূলত: ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর B/C টিম। তাই ঘুরেফিরে কাজটি আবিদ কন্সট্রাকশনেরই থেকে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর Completion Certificate বা সমাপনী সনদ এর সত্যতা যাচাই করার জন্য ১৩/০২/২০২২ ইং তারিখে বাগেরহাটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী(চ.দা) মো: ফরিদ উদ্দিন এ সংক্রান্ত অভিযোগ নীরিক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেন।
যার স্মারক নং-৩৫.০১.০১০৮.৪০০.১৬.৪১৭.২১.২৪১৫।
যা সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে
১. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং, সড়ক ভবন তেজগাঁও ঢাকা।
২. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, ঢাকা জোন, ঢাকা/ময়মনসিংহ/ কুমিল্লা জোন, কুমিল্লা/রাজশাহী জোন, রাজশাহী/বরিশাল জোন, বরিশাল/চট্টগ্রাম জোন, চট্টগ্রাম/সিলেট জোন, সিলেট/রংপুর জোন, রংপুর/গোপালগঞ্জ জোন, গোপালগঞ্জ।
৩. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, খুলনা জোন, সড়ক ভবন, বয়রা, খুলনা।
৪. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, প্রকিউরমেন্ট সার্কেল, সড়ক ভবন, তেজগাঁও, ঢাকা।
৫. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, সড়ক সার্কেল, খুলনা/যশোর/কুষ্টিয়া।
৬. তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ, বরিশাল সড়ক সার্কেল, সড়ক ভবন, বরিশাল/পটুয়াখালী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এত শত অভিযোগের পরও ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন) ইতিমধ্যে কুমিল্লা জোনের আওতাধীন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একটি (PMP) সাইন সিগন্যাল সিঙ্গল টেন্ডারের ৮ কোটি টাকা মূল্যের কাজ কৌশলে বাগিয়ে নেওয়ার সার্বিক প্রক্রীয়া সম্পন্ন করে রেখেছেন।
অভিযুক্ত এ কন্সট্রাকশন কোম্পানীর কাগজপত্র ঠিক না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এই কোম্পানীটি ই টেন্ডারে অংশ নিয়ে উতরে গেল তা ভেবে অন্যান্য কোম্পানীর লোকজন বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
শুধু আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশনই নয়, সড়ক ভবন তেজগাঁও ভবনের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ তুলেছেন রাজধানীর সরদযুক্ত লেনে অবস্থিত “ সোহাগ ট্রেডিং এ্যজেন্সি(SHOHAG TRADING AGENCY) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানিটি অভিযোগ করে যে, অবৈধ ও নিয়ম বহির্ভূত ওটিএম টেন্ডারে ডিপিএম কাজের সনদ মূল্যায়নে না আনা প্রসঙ্গে। তাদের অভিযোগ কাগজপত্র সঠিক না থাকা সত্ত্বেও রানা বিল্ডার্স, মঈন উদ্দিন বাশি, মোজাহার এন্টার প্রাইজ (প্রাঃ) লিঃ নামক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনৈতিক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।২০/০১/২০২২ তারিখে সোহাগ ট্রেডিং এজেন্সি এ লিখিত অভিযোগ করে।যার স্মারক নম্বর-২২২(৭)২৫-১-২২।
এছাড়া ২০/০১/২০২২ উং তারিখে মেসার্স আরমান ট্রেডার্স (M/S ARMAN TRADERS)সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সচিব বরাবর একটি অবিযোগ করে যে, সরকারের মেরামত বরাদ্দের একটি বড় অংশ মাঠ পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীগন টেন্ডার আহবান না করিয়া নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা মনগড়া কিছু কাজ সম্পাদন দেখাইয়া (ডিপিএম পদ্ধতিতে) নিজেদের স্বার্থ ও মুষ্টিমেয় কিছু ঠিকাদার যেমন- আমিনুল হক প্রাইভেট লিঃ, আবেদ মনসুর কন্সট্রাকশন, ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ কে অবৈধ সুবিধা প্রদান করছে। এত করে পিপিআর ২০০৮ এর বিধিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে Superintending Engineer মি. হায়দারের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রীয়াতেই সবকিছু হচ্ছে। ABAID MONSUR CONSTRUCTION (আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)
এর ই-ভেল্যূয়েল করে সড়ক ভবনে পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আমতা আমতা করতে থাকেন এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মি. তারেক এর নাম্বারে কল করা হলে তৃতীয়বারে তিনি রিসিভ করেন। তবে ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন) এর প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি অসৌজন্যতাবশত: মোবাইলের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে গত ৮ই মে স্বশরীরে এই প্রতিবেদক সড়ক ভবন তেজগাঁও, ঢাকা দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সওজ প্রকিউরমেন্ট সার্কেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এর সাথে তাঁর অফিসে উল্লিখিত বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, আবেদ মুনসুর কন্সট্রাকশন অবৈধ পন্থায় কুমিল্লায় একক টেন্ডারে ৮ কোটি টাকার কোন কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে কি-না তা আমার জানা নাই, তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি।
ABAID MONSUR CONSTRUCTION(আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন)এর কাগজপত্র সঠিক না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ই-টেন্ডারে অংশগ্রহণ করছে এবং একর পর এক কাজ পাচ্ছে এ বিষয়ে মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকল কিছু দেখার দায়িত্ব আমার একক না। তবে অভিযোগ পেলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
আর বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন কর্তৃক প্রেরিত অভিযোগ প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন ওহ বাগেরহাটের অভিযোগ ? না না সেসব কোন কাগজ পত্র আমাদের দপ্তরে এখনো পৌঁছেনি !!
ক্রমশঃ তবে দেশের শীর্ষতম স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জামানায় সড়ক ও জনপথ বিভাগে এ রকম মুখোশধারী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
(চলবে, চোখ রাখুন আগামী পর্বে)