এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জে ৪’শ মামলার বোঝা মাথায় বহন করছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা! এ সকল নেতা-কর্মীদের দিনকাটে কারাগার আর কোর্টের বারান্দায়! রাত পোহালেই তাদের হাজিরা দিতে যেতে হয় কোর্টে। এতে কোন কারণবশত হাজিরার ব্যতয় ঘটলে সোজা যেতে হয় কারাগারে। কোর্ট আর কারাগারই এখন তাদের ঘরবাড়ি। কেননা মামলার বোঝা মাথায় বহন করে এভাবে ১৫ বছর ধরে কোর্টের ঘানি টানতে টানতে আর কারাগারে যেতে যেতে এখন তারা ক্লান্ত। অপরদিকে নিজ বাড়িতেও তারা নিরাপদ নয়। আবার কোন আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা আসলেই তাদের মধ্যে পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্ক কাজ করে। ফলে আতঙ্কিত নেতা-কর্মীরা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে নিজ বাসা-বাড়ি ছেড়ে রাতে ঘুমান অন্যের বাসা-বাড়িতে। তবে এতো নির্যাতনের পরও কিন্তু কোন নেতা-কর্মী তাদের মনোবল হারাননি। দৈনিক আলোকিত বাংলা’র এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপকালে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু। তিনি এসময় দুঃখ করে বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ এ পর্যন্ত তাঁর নামে ৬৪টি মামলা দিয়েছে। এসব মামলায় তাঁকে ১৩ বার কারাগারে যেতে হয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপি’র সহসভাপতি ভিপি অমর কৃষ্ণ দাস,নাজমুল হাসান তালুকদার রানা,যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ভিপি শামীম খান,রাশেদুল হাসান রঞ্জন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ সুইট, মির্জা মোস্তফা জামান ও আলমগীর আলম জানান,২০০৮ সাল থেকে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার শতাধিক মামলা হয়েছে। বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই গড়ে ৫০টি করে মামলায় আসামি হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর বিরুদ্ধে,তার মামলার সংখ্যা ৬৪টি।
এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক এজিএস সাংবাদিক এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,জেলা বিএনপির সহসভাপতি মজিবুর রহমান লেবু ৫৫, সহসভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা,ভিপি অমর কৃষ্ণ দাস ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন ৫০টি করে,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি শামীম খান ৪০, মুন্সী জাহেদ আলম ৩৫, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সুইট ৫০, মির্জা মোস্তফা জামান ২০, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আবদুল জব্বার বাবু ৫৫, সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদ ৪০, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন রাজেশ ৫০, ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ ৩০টি করে মামলায় আসামি হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান বাচ্চু আরও বলেন,‘ঝড়-বৃষ্টি নেই, আদালতে যেতেই হবে। কখনও একই দিনে তিন-চারটিতে হাজিরা দিতে হয়। উকিল পৌঁছাতে না পারলে বিচারকের সামনে আসামিই মামলার বিবরণ তুলে ধরেন। এতদিন এসব মামলায় বিচারিক, উচ্চ আদালত ও রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দিতে যেতে হতো। এখন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর হাজিরা সিরাজগঞ্জের আদালতে দেওয়া যাচ্ছে,স্বস্তি বলতে এটুকুই।’
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ পলাশ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে চার শতাধিক মামলায় বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। এসব মামলার মধ্যে ১০ বছর আগে সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর আঞ্চলিক সড়কে কাঠেরপুল সেতুর পাটাতন খুলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলায় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ সুইটসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে ২৮ জনের কারাদণ্ড দেন রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ খান হাসান বলেন, ‘আন্দোলন হলেই মামলা ও ধরপাকড়ের গতি বেড়ে যায়। গায়েবি অভিযোগে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা এসব মামলা দিয়েছে। শুধু মামলা দিয়েই থেমে থাকেনি, আওয়ামী লীগের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আসামি খুঁজে বেড়ায়। এ জন্য আমরা ঘরে মাথা দিয়ে ঘুমাতেও পারি না।’’
জেলার পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘কতগুলো মামলা হয়েছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে অহেতুক মামলা কিংবা কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই।