রাজশাহীতে টাকা চুরির অপবাদে দুই যুবককে বুক সমান মাটিতে পুঁতে ও পানিতে চুবিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার ১ মাস ২০ দিন পর সোমবার রাতে নির্যাতনের শিকার মোহন ইসলামের আম্মা নাসিমা বেগম বাদী হয়ে চারঘাট মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেছন।
এব্যাপারে চারঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আবজাল হোসেন বলেন, মামলায় নয়জনের নাম উল্লেখ করে ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। বাকি ৪জন অজ্ঞাত আসামী।
এজাহারভুক্ত আসামীরা হলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের আনজুর রহমান সাইদুরের ছেলে মুক্তার হোসেন মুক্তা (৪০), সলুয়া গ্রামের সাজেদুর রহমানের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদ শুভ (৩৫), শিবপুর গ্রামের ছইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির হোসেন (৩৮), চামটা গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মো. শুভ (২২), দৌলতপুর গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে ঋত্বিক (২৩), একই গ্রামের গণির ছেলে জিনারুল (৪০), মতিন সরকারের ছেলে সাকলাইন (৩৬), সলুয়া গ্রামের রমজান আলীর ছেলে লালন (৩০) ও একই গ্রামের গমেজ আলীর ছেলে মিজান (৩৫)।
এদের মধ্যে আব্দুল ওয়াদুদ শুভ সলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি।
আবজাল হোসেন জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
গত ৯ জুলাই চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মছু নামে এক যুবককে স্থানীয় মালেকের মোড় থেকে তুলে নিয়ে যায় মুক্তা ও শুভর নেতৃত্বে কয়েক যুবক। তার বিরুদ্ধে এক নারীর ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে নির্যাতন করে। টাকার দাবিতে মছু কে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুতে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে মোহন ইসলামের কাছে টাকা আছে বলে মছু জানায়। এর পর মুক্তা-শুভর বাহিনী মোহনকে তুলে নিয়ে গিয়ে দিনভর নির্যাতন করে।
মোহন জানান, সেদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে মছুকে ধরে নিয়ে গর্ত খুঁড়ে বুক সমান মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। চলে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। দুপুরে সেখান থেকে তুলে একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করে। সেখানে তার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। তারপর বিকেলে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে বিলের পানিতে। পানিতে চুবিয়ে রেখে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সে সময় মাথা তুলে না রাখলে আমি মারা যেতাম।
মোহনের মা ও মামলার বাদী নারী গ্রাম পুলিশ নাসিমা খাতুন বলেন, ঘটনার মাসখানেক পর দুই যুবককে মাটিতে পুঁতে রাখা ও পানিতে চুবানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ প্রথমে থানায় জিডি করে আমাদের মামলা করতে বলে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য আসামীরা হুমকি দিয়ে আসছিল। আসামীদের বিচার নিশ্চিত করার পুলিশের আশ্বাসে দায়ের করা হয় মামলা।
নাসিমা খাতুন বলেন, অনেকদিন পরে হলেও মামলা দিতে পেরেছি। আমার চাওয়া দ্রুত তদন্ত শেষে ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা হোক।