রাস্তার দুই পাশে সারিসারি খেজুর গাছ।শীত মৌসুমে খেজুর রস সংগ্রহে গাছ গুলোকে পরম যত্নে ছাটায় করে রস বের করার উপযোগী করে গড়ে তোলেন সদর উপজেলার মাইচপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার মোল্যা। বড় ছেলে বুলবুল মোল্যা কৃষি কাজ করেন আর ছোট ছেলে হাসিবুরকে নিয়ে দুই বাপ- বেটা খেজুর গাছ নিয়ে পড়ে থাকেন।
এক সময়ের পরিত্যক্ত এই গাছ গুলো থেকে রস সংগ্রহের উদ্যোগ নেন তিনি।এখন রাস্তার দুই পাশের ২’শ উপরে খেজুর গাছ রস সরবরাহের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে তারা। যে রস বিক্রি করে বছরে আয় করছে ২ লাখ টাকা।
জেলায় রসের চাহিদা থাকায় ঠিলে প্রতি রস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। গাছতলা থেকেই এই রস বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।গুড় – পাটালির চাহিদা থাকলে ও রসের চাহিদার কারনে গুড় – পাটালি তৈরি করতে পারছেন না এই গাছি।
কথা হয় আনোয়ার মোল্যার সাথে। তিনি বলেন,আমার ২ ছেলে এক ছেলে কৃষি কাজ করে আর আমরা দুই বাপ বেটা খেজুর গাছ নিয়ে পড়ে থাকি। ২০০ উপরে গাছ কাটি। প্রতিদিন ৭০ টির ও বেশি গাছে ঠিলে পাতা হয়।এতে করে যে পরিমান রস হয় তাতে ৩০ থেকে ৩৫ টিলে রস বের হয় । প্রতিটি ডিলে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করি।গুড় – পাটালির কজি বিক্রি করি৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।বাজারে যদি ৩০০ টাকা বিক্রি হয় তাহলে আমার পাটালি ৬০০ বিক্রি হয়।আমি কোন প্রকার ভ্যাজাল দিয়ে গুড় তৈরী করি না। গাছ কেটে সংসার চালাই। বছর সালে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা থাকে। এই নিয়ে আমার সংসার মোটামুটি ভাল ভাবে চলে।
তিনি আরো বলেন,এই গাছ সরকারি জায়গার গাছ। যার যার জমির সীমানা তাকে আমি লিজ নিয়ে থাকি।তাকে রস দিয়ে থাকি। কোন কোন মালিককে গুড় ও দিয়ে থাকি।
আনোয়ার মোল্যার ছেলে, হাসিবুব বলেন,এই রাস্তা পাকা হওয়ার কারনে, রস বাড়ি নিতে পারি নে। কাঁচা রস রাস্তা থেকে বিক্রি হয়ে যায়।
আজ গাছ কাটব, মনে করেন ২৫ থেকে ৩০ ঠিলে রস হবে। ২৫ ঠিলে রসই এখান থেকে বিক্রি হয়ে যাবে।প্রচুর পরিমানে গুড় ও পাটালির ওর্ডার দেওয়া আছে। রসের অতিরিক্ত চাহিদার কারনে গুড় তৈরী করতে পারছি না।
নড়াইল থেকে রস কিনতে আসা রোপাই শেখ বলেন, শীত মৌসুমে রস পিঠা খেতে চেয়েছে নাতি- নাতনি। চারিখাদার আনোয়ারের কাছ থেকে নেওয়া রস গাছ থেকে পেড়ে বিক্রি করছে। চোখের সামনে কিনছি। ভ্যাজালের কোন ভয় নেই। অনেক জায়গা রসে পানি মিশিয়ে বিক্রি করে। এমনিতেই রস এখন পাওয়া যায়না।
শাহাবাদ থেকে আসা রুমকি রানী বলেন, এখান থেকে দুই ঠিলে রস ৬০০ টাকা দিয়ে কিনলাম। রস কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু এখানে রসের কোন কমতি নেই। তবে দাম বেশি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, আনোয়ার মোল্যা খেজুর রস বিক্রি করে বছরে প্রায় ২ লাখ টাকার মত আয় করেন। অনেক জায়গাতে খেজুর গাছ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার মত করে যদি অন্যরা গাছগুলো যত্ন সহকারে রস সংগ্রহ করার উপযোগী করে গড়ে তোলে তাহলে জেলায় রস, গুড়ের চাহিদা পুরোনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারবে।