বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার স্বপ্ন দেখে যাওয়া জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশ্বজুড়ে তখন চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ নামের উন্মাদ এক লড়াই। সেই ছায়া যুদ্ধের দুই পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েই বসে থাকেনি, একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিল নতুন সব বিভীষিকাময় অস্ত্র নিয়ে গবেষণা। এতে সমানে সম্প্রসারিত হচ্ছিল তাদের পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার।
প্রশান্ত মহাসাগরের বিকিনি আটোল আর মার্শাল আইল্যান্ড এলাকায় ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্র নতুন সব পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ চালিয়ে যেতে থাকে। এরই একটি পরীক্ষা জাপানের মাছ ধরার জাহাজসহ আশপাশে অবস্থানরত কয়েকটি জলযানের ওপর তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে জাপানি জাহাজের নাবিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রচারিত হতে থাকায় বিশ্বের অনেক দেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকজন এর প্রতিবাদে সমবেত হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলেন, সেটিই হচ্ছে নিহন হিদানকিও। নরওয়ের রাজধানী অসলোর স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজিত বিশেষ এক অনুষ্ঠানে নিহন হিদানকিওর প্রতিনিধিরা নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সংগঠনের আনুষ্ঠানিক নাম আণবিক বোমা হামলার ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন সংগঠনের কনফেডারেশন হলেও সংক্ষিপ্তভাবে নিহন হিদানকিও নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানানো বিরামহীন প্রচার অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে জাপানের দুই শহরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা আণবিক বোমায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহত ব্যক্তিরা যেন সঠিক চিকিৎসা পান, সেই চেষ্টাও সংগঠনের ছিল। শুরুতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হলেও দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জনে বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ‘হিবাকুশা’ নামের পরিচিতিদের সেই সংগঠন সফল হলেও দ্বিতীয় লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি এবং কবে তা অর্জিত হবে তার কোনো আভাস এখনো আদৌ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তা সত্ত্বেও নিহন হিদানকিও বসে থাকেনি। জাপান ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তারা চালিয়ে গেছে পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে প্রচারাভিযান।
হিদানকিওর সেই নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি’ ২০২৪ সালের পুরস্কারের জন্য নিহন হিদানকিওকে বেছে নিয়েছে। শান্তির নোবেল পুরস্কার নিয়ে নানারকম সমালোচনা প্রায়ই উঠে থাকলেও এবারের পুরস্কার নিয়ে কেউ সেরকম কোনো কথা তোলেননি; বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সঠিক প্রাপককে পুরস্কৃত করার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কমিটির প্রশংসা করা হয়েছে। জাপানেও সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি সরকারও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো ছাড়াও নিহন হিদানকিওর নেতাদেরও অভিনন্দন জানিয়েছে।