মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে আসা জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জলের বিরুদ্ধে দলের সুবিধাবাদী শ্রেণীর নেতাদের অপপ্রচার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগে সরকারের সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। এমনকি হুমকি ও চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় জিডি করিয়েছে এই চক্রটি। অভিযোগে বলা হয়, চক্রটির নেপথ্যে রয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি নাসের রহমান।
জানা গেছে, স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে মৌলভীবাজারের রাজপথে প্রকাশ্যে একদিনের জন্য নাসের রহমানকে দেখা যায়নি। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দিলেই তিনি নিরাপদে চলে যেতেন। সেজন্য একদিনের জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়নি। এছাড়া দলের কর্মীদের সঙ্গে রুক্ষ আচরণ করেন তিনি। তার এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কেন্দ্রকে একাধিকবার অভিযোগও জানানো হয়। এসব কারণে বিএনপির হাইকমান্ডও তার প্রতি ক্ষুব্ধ।
গত ৫ই জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এলাকায় হাজির হন নাসের রহমান। এরপর গত ১০ আগস্ট নাসের রহমানের বাসভবনে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে নাসের রহমানের একটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে জাকির হোসেন উজ্জলের বিরুদ্ধে নাখোশ হন। এরপর থেকে জাকিরের প্রতি নাখোশ হন নাসের রহমান। এমন একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নাসের রহমান নিজের মালিকানাধীন দোসাই রিসোর্টের এইচআর ম্যানেজার মোস্তফা সারোয়ার রুবেলকে দিয়ে বিএনপির এক কর্মীকে ফোন করান। তাকে সম্প্রতি হামলা-ভাংচুরের সঙ্গে যুবদল নেতা উজ্জ্বলের নাম বলানোর চেষ্টা করান। কিন্তু ওই কর্মী অস্বীকার করেন।
এরপর শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাদশা মিয়া কাজলকে দিয়ে উজ্জ্বলের নামে শ্রীমঙ্গল থানায় জিডি করান। একই অভিযোগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠান তিনি।
বাদশা মিয়া জিডিতে যে প্রজেক্টের কথা বলেছিলেন সেই মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, জাকির হোসেন উজ্জ্বল আমাকে সরাসরি ফোন করেননি। তবে উনার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন কাজটি ওনাকে দেয়ার জন্য।
এদিকে জাকিরের বিরুদ্ধে কাজী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কমলগঞ্জের বিএনপি নেতা হারুন মিয়া ও তার সহযোগী কুতুব মিয়াকে গালি-গালাজ ও হুমকি ধমকির যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটিও বানোয়াট।
কাজী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হারুন উর রশিদ বিএনপি’র মহাসচিব এর বরাবরে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে এর জবাব দেন। এছাড়াও বাদশা মিয়া কাজলের দায়ের করা অভিযোগটি আমলে না নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হুমকি ধমকি প্রদান করেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এদিকে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী বলেন, দলীয় কোন্দলের কারণে হয়ত কেউ তাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে। সে দলের একজন ত্যাগীনেতা যে অনেক মামলা ও হামলায় জর্জরিত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন উজ্জ্বল বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে হেয় করার জন্য ও আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এসব করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে জেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর থেকে একটি চক্র দলের ভেতরে আমাকে কালার করার জন্য এসব করাচ্ছে। এছাড়া কোম্পানির ম্যানেজার যিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি পরে তা প্রত্যাহার করেছেন।