দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়াল থাবা লেগেছে এশিয়ার বৃহত্তম ঝিনাইদাহ জেলার দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারে। খামারে বীজ উৎপাদনের জন্য বিষ্ঠা ক্রয় ও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করছেন গোকুলনগর খামারের উপ-পরিচালক জাহিদুর রহমান জাহিদ উপসহকারী পরিচালক এমদাদ হোসেন শরিফুল ইসলাম ও আরিফ হোসেন ।
গোকুলনগর খামারে নিয়োজিত মহিলা শ্রমিকদের দৈনিক ৫০০ টাকা হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও ২০০ টাকা করে দিয়ে থাকেন খামার কতৃপক্ষ। , ভুয়া মাস্টার রোলে শ্রমিক দেখানো সহ এমন কোন অনিয়ম নেই যা জাহিদুর রহমান করেন না। শুধু তাই নয় মন্ত্রণালয়ের আদেশকে ও তিনি তোয়াক্কা করেন না।
সুদ খোর, ঘুষখোর, এর চেয়েও ভংঙ্কর একটি তথ্য অনুসন্ধানে বের হয়েছে তা হলো বিষ্ঠা খোর। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহ জেলার দত্ত নগর বীজ উৎপাদন খামার।
গোকুলনগর খামারের উপ পরিচালক জাহিদুর রহমান অত্র এলাকায় সবাই বিষ্ঠা খোর হিসেবে পরিচিত। বিষ্ঠা হলো মুরগীর পায়খানা। বিষ্ঠা মাছের খামারে মাছ উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।কিন্তু উপ পরিচালক জাহিদুর রহমান টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ভুয়া কোটেশনের মাধ্যমে বিষ্ঠা কেনা দেখিয়েন।নাম প্রকাশে একজন উপ পরিচালক জানান মুরগির পায়খানা ধানের জমিতে ব্যবহার কোন জন্মেই শুনি নাই।
উপ-পরিচালক জাহিদুর রহমান ধানের বীজ উৎপাদন বাড়াতে ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় করে খামারে ব্যবহার করেছে এই মর্মে দাবী করা হলেও বাস্তবে এর কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যায় নাই। মুলত: ৯০ টন বিষ্ঠা ৩ কিস্তিতে ৩০ টন করে মোট ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় দেখিয়ে পুরো অর্থ আত্বসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
গোকুলনগর খামারের কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানকে সবাই বিষ্ঠা খোর হিসেবে চিনে। শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে যে ৯০ টন বিষ্ঠা সাপ্লাই দেওয়ার মত কোন মুরগীর খামার নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠান কোন পন্য ক্রয় করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রয় টেন্ডার এর মাধ্যমে ক্রয় করতে হয় । কিন্তু জাহিদুর রহমান ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় ক্ষেত্রে কোন রকম নিয়ম-নীতির ধার ধারেন নাই। নিজের ইচ্ছা মত বিষ্ঠা ক্রয় দেখিয়েছেন।
তার অধীনস্থ একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনারা ক্রয় লেটার দেখেন কবে? কোথায় থেকে কোন প্রক্রিয়ায় বিষ্ঠা ক্রয় করা হয়েছে এবং কেন ক্রয় করা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ নাই।
একাধিক সূত্রে থেকে জানা গেছে যে ওভার রাইটিং করে ভিন্ন কালি ও হাতের লেখায় ৩ কিস্তিতে ৯০ টন বিষ্ঠা ক্রয় দেখানো হয়েছে বাস্তবে এর কোন অস্তিত নাই। সমুদয় অর্থ উপ-পরিচালক নিজেই আত্বসাৎ করেছেন।
এ ছাড়াও দীর্ঘ দিনের বীজ উৎপাদন তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে হাইব্রীড ধানের যে বীজ উৎপাদন হত; জাহিদুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর তা আরও কমে এসেছে। তাহলে বিষ্ঠা কেন ক্রয় দেখানো হলো।
জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি শুধু বিষ্ঠা ক্রয়ই সীমবদ্ধ নয়। তিনি বিত্রডিসির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের কোন নির্দেশনাকেও তোয়াক্কা করেন না। এমনকি তার বিরুদ্ধে একাধিক অফিসিয়াল দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্বসাৎ, হাইব্রীড বীজ প্রেরনে অনিয়ম, শ্রমিকের টাকা মেরে দেওয়া, খামারের প্রয়োজনীয় উপকরন না কিনে টাকা আত্বসাৎ করা সহ নানা অভিযোগ রয়েছে উপ-পরিচালক বিরুদ্ধে। দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারের দুর্নীতির নাগালে টেনে ধরা কোন ভাবেই সম্ভবপর হচ্ছে না।
দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করার পরিপত্র থাকলেও উক্ত খামারে এখনো তা কার্যকর হয় না। মহিলা শ্রমিকদের হাজিরা ৫০০ টাকা হলে ও দেওয়া হয়ে থাকে ২০০ টাকা। কিন্তু মাস্টার রোলে দেখানো হয়ে থাকে৫০০ টাকা। এসব যেন শুভংকরের ফাঁকি। প্রতিষ্ঠান যে মজুরি নির্ধারন করা আছে কাগজে কলমে তা প্রদান করা হলেও বাস্তবে এর চেয়ে কম মজুরি প্রদান করা হয়। এ রকম একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
বিগত ২২-২৩ অর্থবছরের শ্রমিক হাজিরা এবং মোট শ্রমিক বরাদ্দ ও মাস্টার রোল দেখলে বোঝা যাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন উপ পরিচালক জাহিদুর রহমান। । ভুয়া মাস্টার রোল তৈরী করে শ্রমিকদের হাজিরা প্রদান করে থাকেন উক্ত খামারের ৩ জন উপসহকারী কর্মকর্তা এমদাদুল হক শরিফুল ইসলাম আরিফ উদ্দিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক এ প্রতিবেদক কে বলেন আমরা শুধু হাজিরা নিয়ে থাকি স্যার,রা নিজের ইচ্ছে মতো মাস্টার রোল তৈরী করেন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় অভিযুক্ত উপ পরিচালক জাহিদুর রহমানের সাথে তিনি বলেন আমার অফিসে আসেন আগামীকাল ১২ টায় কি তথ্য দেব আপনার আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ অনেক নিউজ ও হয়েছে আসেন কথা হবে।
ইতিপূর্বে দত্তনগর কৃষি খামার উৎপাদিত ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৫ টাকার ধান ও গমবীজ আত্বসাৎতের অভিযোগ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসির) ৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।
দত্তনগর খামারের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ন পরিচালক কামরুজামান শাহিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। অথচ তথ্য সূত্রে বলছে সকল কর্মকর্তাদের মুল কারিগর হচ্ছে কামরুজামান। তিনি সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি করার মূল হোতা।