নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে রাতের আধারে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যালয়ে নিজ অফিসে বসে বাল্যবিবাহ দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম খান। ঘটনাটি ঘটেছে (২৪ শে মে) বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৈকুন্ঠপুর গ্রামের মো. শামীম হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ (১৬) ও ব্যাসপুর গ্রামের মোছা: মরিয়ম আক্তার (১৫) প্রেমের টানে ঘর ছাড়ে কিছু দিন আগে। এরপর তারা গ্রামে ফিরে আসে। সহযোগিতা চান নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে। সেই মোতাবেক চেয়ারম্যান ছেলে- মেয়ে সহ উভয় পরিবারকে উপজেলা পরিষদের তার অফিসে ডেকে নেয়। উভয়ের পরিবার নিয়ে রাত ৯ টায় উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের নিজ অফিসে বসে আধাইপুর ইউনিয়নের কাজী জাকির হোসেনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ দেন।
গোপন সংবাদের ভিক্তিতে কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হোন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে। সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান স্থানীয় সাংবাদিকরা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কে প্রশ্ন করেন। ছেলে মেয়ে উভয়ের বয়স হয়েছে কি- না। এবং জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ড দেখে বিবাহ দেওয়া হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বিবাহ বন্ধ না করার অনুরোধ করেন সংবাদিক কর্মিদের।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ছেলে-মেয়ের বিবাহ দিয়ে দিয়েছেন।
তাৎক্ষণিক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা. আতিয়া খাতুন কে সংবাদ কর্মিগণ বিষয়টি জানালে, তার কিছুক্ষণ পর একে একে সবাই উপজেলা পরিষদ থেকে বের হতে দেখা যায়। প্রায় ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও আইন প্রয়োগকারীর কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় নি। সচেতন মহলে প্রশ্ন নামেই বাল্য বিবাহ আইন আছে, এর কোন প্রয়োগ হয় না। যদি প্রয়োগই হতো তাহলে এখানে আইনি ব্যবস্থা করা হতো ।
আধাইপুর ইউনিয়নের কাজী জাকির হোসেন বলেন, বিয়ে পড়ানোর জন্য আমাকে ফোন করে এখানে ডেকে এনেছে উপজেলা চেয়ারম্যান। লেখালেখি শুরু করতেই আপনারা এসেছেন। কাজীর কাছে সাংবাদিকরা ছেলে ও মেয়ের প্রমাণ পত্র হিসাবে তাঁদের জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডি দেখতে চাইলে তিনি ব্যাগ থেকে আনার কথা বলে ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম খান বলেন, মেয়েটি এতিম। তাই উভয় পরিবারের লোকজন নিয়ে বিবাহের কাজ করছিলাম। তবে বিবাহ হয় নি। উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্যালয়ে আপনার অফিসে বসে আইন বিরোধী এই বাল্য বিবাহ আপনি দিতে পারেন কি না বলে প্রশ্ন করলে তিনি কনো উত্তর প্রদান করেন নি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. আতিয়া খাতুনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃ দাঃ) মো কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে আমি জানি না। না জেনে মন্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। তবে আপনার মাধ্যমে যতটুকু জানলাম। বাল্য বিবাহ উপজেলা পরিষদে শুধু না সব জায়গায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিয়া খাতুন কে বিষয়টি অবগত করার পরও কেন তিনি কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এলাকার সচেতন মহল বলেন, যারা বাল্য বিবাহ বন্ধের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তারাই যদি প্রশাসনিক ভবনে অফিসে বসে আইন ভঙ্গ করে বাল্য বিবাহ দেয়। তাহলে কি আর বাল্য বিবাহ বন্ধ হবে। আর তাঁদের কাছ থেকে দেশ ও জাতি কি আশা করবে?