সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা ২ টার দিকে পৌর এলাকায় আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেলকুচি পৌর সভার মেয়র ও তাঁর দুই বছরের শিশু সন্তান অস্তিত্ব হকসহ চার জন আহত হয়েছেন। আহত অপর দুই জন হলেন বেলকুচি উপজেলার সংবাদ পত্র এজেন্ট দৌলত মন্ডলের ছেলে নাবিল মন্ডল (৩৫) ও মেয়রের অনুসারী মোস্তাফিজুর রহমান (৪০) তাদের বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলার ঘটনার চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করতে গেলে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি আবু মুসাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। সেই সাথে তার মুঠোফোনটি সিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।
পুলিশ, আহত ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার স্থানীয় আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের নিরীক্ষা দল নিরীক্ষা করতে এসেছিলেন। বেলকুচি পৌর সভার মেয়র সাজ্জাদুল হক ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ায় নিরীক্ষা কালে তিনি তাঁর শিশু সন্তান অস্তিত্ব হককে কোলে করে নিয়ে বিদ্যালয়ে নিরীক্ষক দলের সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে বেলা ২ টার দিকে বিদ্যালয়ের কার্যালয় থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে স্থানীয় সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মন্ডলের ব্যাক্তিগত সহকারী (পিএস) সেলিম সরকারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যেই মেয়রের পথরোধ করে ও তাঁর ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এ সময় মেয়র দ্রুত তার সন্তানকে কোলে নিয়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে পরলে এলোপাতাড়ি আঘাতে শিশুটি সিটকে তাঁর কোল থেকে মাঠের মাঠে পড়ে যায়। পাশে থেকে মেয়রের দুই অনুসারী ঠেকাতে এলে তাদেরকে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তারা। খবর পেয়ে মাত্র ৩০০ মিটার দুরে বেলকুচি থানা থেকে পুলিশ আসলে তাঁরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
মেয়র সাজ্জাদুল হক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মন্ডলের অনুসারী বেলকুচি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুলফিকার আহম্মেদ শিপন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শেখ ও এমপির পিএস সেলিম সরকার আমাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে তাঁরা আমাকে হত্যার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন, আজ বেলা দুইটার দিকে আমি আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আসার সময় পিএস সেলিম সরকার পিস্তল বের করে আমার পথরোধ করে। এর পর কাউন্সিলর হাফিজুল ইসলাম, কাউন্সিলর জুলফিকার আলী,সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী আমার ওপর অতর্কিত লোহার রড দিয়ে আক্রমণ করে। তাঁরা এলোপাতাড়ি লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে আমাকে, আমার শিশু সন্তানসহ দুই অনুসারীকে আহত করেছে।’
দৈনিক মানবজমিনের বেলকুচি প্রতিনিধি আবু মুসা বলেন, দুপুরে দিকে সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন মন্ডলের পিএস তার কিছু লোকজন নিয়ে আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ে মধ্যে ঢুকে পড়েন। তখন গোপন সূত্রের তথ্য পেয়েছি যে সেখানে একটা এমন হামলার ঘটনা ঘটবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি সহ আরও কয়েকজন সংবাদ কর্মী সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়া মাত্র মেয়রের ওপর এমন হামলার ঘটনা দেখতে পেয়ে আমি মুঠোফোনে ছবি তুলতে নেই । তখনই তাঁরা আমার ওপরে হামলা করে মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে নেয়।
সোহাহপুর নূতনপাড়া আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদি মাসুদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের নিরীক্ষা দলের নিরীক্ষা শেষে তাঁরা যখন বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। মেয়র সাহেবও বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে একটু এগিয়েছেন ঠিক তখনই তাঁর ওপর এই হামলা করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে সে বিষয়টি আমি বলতে পারছি না।
সংসদ সদস্যের পিএস সেলিম সরকার সংবাদ কর্মিদের বলেন, গত সাত মাস আগে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন হয়ে মেয়র পুনরায় সভাপতি হয়েছেন এ বিষয়টি স্থানীয় অভিভাবকেরা বেশিরভাগ জানেন না। এনিয়ে কিছু অভিভাবক শিক্ষাবোর্ডের নিরীক্ষক দলকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন । তাঁরা এ অভিযোগের বিষয়টি লিখিতভাবে জমা দিতে বলেছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে মেয়রের লোকজনের একটু কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়েছে। আমি খবর পেয়ে বিষয়টি জানতে সেখানে গিয়েছিলাম মাত্র।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাক তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’