বিগত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ সকাল আনুমানিক ৯ টায় একজন নাবালিকা কন্যা শিশু মাইশা খাতুন (০৭), পিতা- মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাং- ঝুটিয়াডাঙ্গা, থানা-মিরপুর, জেলা-কুষ্টিয়া বর্তমানে নানা মোঃ শহিদুল ইসলাম, পিতা- মৃত নূর হোসেন, সাং- ভোগাইল বগাদি, থানা-আলমডাঙ্গা জেলা-চুয়াডাঙ্গা তার নানার বসতবাড়িতে মোবাইল চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে বিদ্যুৎ স্পষ্ট হয়েছে- এমন ইতিহাস নিয়ে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে একই তারিখ সকাল ৯টা৪০ মিনিটে ভর্তি করে। একই তারিখ সকাল আনুমানিক ১০ টায় কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ভিকটিম মৃত বলে ঘোষণা করেন। নাবালিকা মৃত কন্যা সন্তানের মা পপি খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্যসম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ করলে অফিসার ইনচার্জ চুয়াডাঙ্গা সদর থানা একই তারিখ রাত ১০টা ৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অপমৃত্যু মামলা নম্বর- ১৪ তারিখ ২৯.০২.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রুজু করেন। অতঃপর অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/মোঃ আতিকুর রহমান জুয়েল রানা কর্তৃক এই কন্যা শিশু সন্তানের মৃত্যু বিষয়ে ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরণের নেতিবাচক তথ্য পাওয়ার কারণে মেয়েটির দুর্ঘটনামূলক স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে, তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। প্রসঙ্গতঃ তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়না তদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গার মৌখিক নির্দেশে এই নাবালিকা কন্যা শিশু সন্তানের মৃত্যুটি হত্যা জনিত না দুর্ঘটনামূলক তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করেন। অতঃপর ভিকটিমের নানা মোঃ শহিদুল ইসলাম, পিতা- মৃত নূর হোসেন, সাং-ভোগাইল বগাদি, থানা- আলমডাঙ্গা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আলমডাঙ্গা থানার মামলা নম্বর- ০১, তারিখ ০৩/০৫/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড অনুযায়ী একটি খুন মামলা রুজু হয়।
গতকাল ০৫ মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ সকাল ৮টায় আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, ডিআইও-১ ও মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই বিকাশ কুন্ডুসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনকালে নাবালিকা মৃত শিশু মাইশা এর মা পপি খাতুনের কথা বার্তায় সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেন। কেন এই হত্যাকান্ড ঘটানো হলো? তার কোন সহযোগী ছিল কিনা?- এসব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন যে, তিনি নিজেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন।
তদন্তে নিহত মাইশার মা পপি খাতুন এর পূর্বাপর পারিবারিক ব্যক্তি জীবন, বৈবাহিক জীবন অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া গেছে যা এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। এই মামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত আসামী পপি খাতুন বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বড় সফলতা হচ্ছে, একটি স্পর্শকাতর খুন মামলা রুজু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত মূল কিলার এই নাবালিকা কন্যা সন্তানের আপন মা পপি খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে। যেহেতু এটি একটি স্পর্শকাতর খুনের ঘটনা সেহেতু চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তদন্তকালে প্রাপ্ত সকল তথ্যাদি যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত আসামীকে বিচারের মুখোমুখি করবার লক্ষ্যে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ জাতীয় আরো খবর ....