1. admin@crimenews24.net : cn24 :
  2. zpsakib@gmail.com : cnews24 :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়ে আওয়ামী লীগ বধ্যভূমি তৈরি করেছিল: টুকু সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের উপর হামলা এবং ডিসি কর্তৃক গালাগাল করার প্রতিবাদে মানববন্ধন নিজের চেহারা একবার আয়না দিয়ে দেখুন: মৌলভীবাজারে জামায়াতের আমীর শ্রীমঙ্গলে শিশু ধর্ষণ মামলায় আটক ২ তানোরে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতারণায় প্রথম স্ত্রী নিঃস্ব সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ রাজশাহীতে হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক- ৮ সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ সভা মাছের উৎপাদন বৃদ্বিতে সুন্দরবনে প্রকল্প হাতে নিয়েছে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আটক 

মৌলভীবাজারে বেড়েছে কিশোর গ্যাং অতিষ্ঠ জনজীবন -মোয়াজ্জেম চৌধুরী

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৬৭ বার নিউজটি পড়া হয়েছে

বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য এক ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই সমাজে এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে । এদের কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্টসহ মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

মৌলভীবাজার জেলা সদরে বেশ কিছুদিন ধরে কিশোর গ্যাং এর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। কিশোর গ্যাং অর্থাৎ উঠতি বয়সী ছেলেরা যারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে নামে মাত্র ভর্তি থাকলেও লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে কয়েকজন একত্রিত হয়ে অনৈতিক আড্ডা ও অন্ধকার পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

কারা এই কিশোর গ্যাং
——————————–

কিশোর গ্যাং হচ্ছে ১৮ বছরের নিচে যেসব কিশোর দলবদ্ধভাবে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা চালায়। দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৬ বছরের কিশোররাই কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হচ্ছে।

এদের বেশির ভাগ বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, টমটম চালক, রিক্সা চালক ও বেকার কিশোরেরা। যাদের ব্যবহার করে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোরেরা।

 

কিশোর গ্যাং এর পরিনতি
————————————-

এরা সবাই একত্রিত হয়ে যেমন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করে প্রায়ই বিভিন্ন বড় ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটে এবং খুনাখুনির সংবাদ সবার জানা রয়েছে।

কিন্তু ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে রাজি হন না। কারণ এদের কাছে সম্মানী কিংবা বৈজষ্ট কাউকেই সম্মান করার মনমানসিকতা নেই। তারাই এই নিয়ন্ত্রণ করে! এমনকি অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের আশকারা দিয়ে মাথায় তুলে রাখেন।

আবার অনেক পরিবার রয়েছে যারা তাদের সন্তানদের ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু সেই সন্তানেরা বাবা মা ভাইসহ অন্যান্যদের এত অবাধ্য হয়ে পড়ে যে তখন তাদের পক্ষে সন্তানকে আর অপরাধের হাত থেকে আগলে রাখতে পারেন না।

 

খেসারত কিশোর গ্যাং এর
————————————–

যার ফল ভোগ করেন যখন ছেলে প্রতিহিংসা ও নানাবিধ কারণে ছেলেদের জীবননাশ হয়ে পরে অথবা মারামারির কারণে পঙ্গুত্বসহ পিছানায় পড়ার অবস্থা হয়ে যায়। তখন শুরু হয় পরিবার ও কিছু সুশীল সমাজের লোকজন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বিচার চাইতে গিয়ে গলা ফাটান।

আদৌ কি সুশীল সমাজ ন্যায় বিচার চান? নাকি লোকদেখানো আর ফটোসেশান করার জন্য ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধী কিশোর গ্যাং ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেকে সাচ্চা সাধু হিসেবে পরিচিত ঘটান।

 

কিশোর গ্যাং এর মোটরবাইকে অতিষ্ঠ
——————————

শহরে প্রায় প্রতিদিন এখন কিশোরদের মোটরবাইক শোডাউন। উচ্চমাত্রার সাইলেন্সার লাগিয়ে বিকট শব্দ ও হর্ণ বাজিয়ে পুরো শহর কাঁপিয়ে তুলছে। সাধারণ জনগণের সাথে কথা বললে তাদের থেকে শোনা যায় যে এসবের প্রতিবাদ করে নিজের বিপদ ডেকে আনার চেয়ে বসে থাকা ভালো।

অন্তত ইজ্জত বাঁচবে আর মারধোর খেতে হবে না কারণ (নাম না বললেও) এরা অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের লোক। কথা বললে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাবে। শোনা যায় এসব নানান কথা।

শহরের সর্বস্তরের রাস্তাঘাটে তাদের বিচরণ। যার কারনে সুস্থ অসুস্থ সবাই অতিষ্ঠ কিন্তু ভয়ে কেউ অভিযোগ করতে যায় না।

এদের পরিচয় জানতে গেলে কেঁচো খুঁজতে গিয়ে না আবার সাপ বেরিয়ে আসবে না যে তা বলা বাহুল্য। কেননা কাদের ইশারায় আর ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্ন ঘুরে বেরিয়ে শহরের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।

 

শহরে কিশোর গ্যাং ছড়াছড়ি
—————————————–

প্রায় সময় দেখা যায় কখনো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, কখনো চৌমুহনী, কলেজ গেইট, ওয়াপদা মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম (সাইফুর স্টেডিয়াম) বেরীরপাড়, কুসুমাগ পয়েন্ট এই সমস্ত জায়গা থেকে তারা শোডাউন বের করে জনমনে আতংক আর অতিষ্ঠের তীব্র মাত্রা ধারন করে চলেছে।

এছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল সড়ক, চুবড়া, বনবিথী, দক্ষিণ কলিমাবাদ, মিশনরোডসহ প্রায় সব এলাকায় একক ভাবে কখনো দলবদ্ধভাবে বিকট শব্দের সাইলেন্সার লাগিয়ে কাঁপিয়ে তুলছে এলাকা গুলোতে বসবাসরত শিশু থেকে শুরু বৃদ্ধ অসুস্থ লোকদের।

অথচ যানবাহন আইনে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে যে সমস্ত এলাকায় হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বার, অফিস আদালত, প্রশাসনিক ভবন, রয়েছে এসব এলাকাকে নিরব এলাকা বলে ঘোষণা করা আছে। চুরে না শুনে ধর্মের কাহিনি এমনটাই হচ্ছে বর্তমান অবস্থা।

 

কিশোররা কি শুধু এতেই সীমাবদ্ধ!
———————————————–

কিশোর গ্যাং এর পিছনে রয়েছে এদের গডফাদাড়রা পরোক্ষ মদদদাতা। তাদের কি অতিষ্ঠ করাতেই কি শেষ নাকি চলছে আধিপত্য বিস্তার, মাদকের ভয়াবহ ব্যবসা, স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের নেশার দিকে ধাবিত করা নিজের দলে টেনে নেয়ার জন্য।

এক কথায় বলা যায় কিশোর গ্যাং, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা।

 

কিশোর গ্যাং দমনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালন
————————————————————————-

কিশোর গ্যাং দমনে ও মাদক সেবন বন্ধে সরকারের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ইদানীং দেখা যাচ্ছে বেড়ে চলেছে।

তথাপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের গ্রেফতার ও মাদক সেবী এবং ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার পর আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অদৃশ্য শক্তি তথা গডফাদারদের দ্বারা আবারও বেরিয়ে আসে এবং তাদের কর্মকান্ড শুরু করে দেয়। “যা এমন গরীবকে আইন শাসন করে আর বড়লোক’রা আইনকে শাসন করে।”

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ প্রশাসন প্রায়শই কিশোর গ্যাং বন্দে অভিযান পরিচালনা ও অতিরিক্ত বিকট শব্দের মোটরবাইক আটক করলেও বের হয়ে আবারও তাদের উৎপাত শুরু করে।

 

কিশোর গ্যাং দমনে করণীয়
—————————————

কিশোর গ্যাং বন্দে সর্বপ্রথমই একটি কিশোরের পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে তার বাবা মা ও পরিবারের লোকজন।

১। পরিবারের অবাধ্য হয়ে অবাধ চলাফেরা ঘোরাঘুরিসহ বাজে সঙ্গ ত্যাগ করাতে হবে।

২। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।

৩। যারা মারামারি দলাদলি করে তাদের সঙ্গ সম্পূর্ণ ত্যাগ করাতে হবে।

৪। যে সমস্ত কার্যকলাপে মানুষ অতিষ্ঠ হয় তা থেকে বিরত রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

৫। অল্প বয়সে মোটরবাইক দেয়া বন্ধ করতে হবে।

৬। লেখা পড়ার পাশাপাশি ভাল বন্ধু হিসেবে পরিবারের লোকজন আচরণ করতে হবে।

৭। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো ও অতিরিক্ত হর্ণ ব্যবহার করতে সম্পূর্ণ বিরত রাখতে হবে।

৮। জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।

৯। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কাজে উৎসাহিত করতে হবে।

১০। সমাজের সুশীল সমাজের লোকদের এগিয়ে এসে সচেতনতা তৈরিসহ তাদের নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের কুফল তুলে ধরতে হবে।

১১। সামাজিক সংগঠন গুলো কিশোর গ্যাংয়ের কুফলের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে।

১২। সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে কিশোর গ্যাং বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১৩। রাষ্ট্র তথা নীতি নির্ধারকেরা সুনির্দিষ্ট ভাবে আইন প্রনয়ণ করতে হবে।

১৪। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫। প্রয়োজনে সরকারি ভাবে এদের কাউন্সিলিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।

কারো একার পক্ষে কিশোর গ্যাং দমন করা সম্ভব নয়। সচেতন মহল মনে করেন, জেলা পুলিশ প্রশাসনকে কিশোর গ্যাং সহ অপরাধ দমনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা ও সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা করা তাহলে হয়তো এর ভাল সুফল পাওয়া যাবে।

 

সর্বোপরি বলা যায় কিশোর গ্যাং দমন করার জন্য আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই অপরাধ রোধ করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।

 

লেখক
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
কবি, গবেষক, কলামিস্ট, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী। মৌলভীবাজার, সিলেট, বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর ....
© All rights reserved © 2022 crimenews24.net
Design & Developed By : Anamul Rasel