শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ঘনঘন লোডশেডিং এর কারনে কৃষকের বোরো আবাদ হুমকীতে পড়েছে। বোরোধান খেতে চাহিদা মতো সেচ দিতে না পারায় চলমান বোরো আবাদ নিয়ে আশংকায় রয়েছেন কৃষক। বর্তমানে সেচের অভাবে অনেক এলাকায় বোরো ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। একইসাথে চলমান রমজান মাসে ইফতার, সেহেরী ও তারাবির নামাজের সময় স্বাভাবিক বিদ্যুত সরবারাহ না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুসল্লীরা। তাই শহরে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সীমিত করে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামের কৃষকের ফসল রক্ষার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
জানা গেছে, দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে নালিতাবাড়ী উপজেলায় চলতি বোরো আবাদে ২৩ হাজার হেক্টরেরও অধিক পরিমান জমিতে বোরো ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। এসব জমির আবাদের লক্ষণও খুব ভালো। আবাদের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং শুরু হয়েছে। দিনেরাতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে টানা ২ ঘন্টা সময়ও বিদ্যুত থাকছে না। এতে সেচ মালিক ও কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের সেচপাম্প নিয়মিত চালাতে পারছেন না। জমিতে চাহিদা মতো সেচ দিতে না পারায় বেশকিছু এলাকার উঠতি বোরো ফসলের খেত ফেটে যাচ্ছে। এই অবস্থা যদি আগামী এক সপ্তাহ চলতে থাকে তাহলে ধানখেত মরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে এলাকার কৃষকরা জানান। এছাড়া চলমান রমজান মাসে ইফতার, সেহেরীর ও তারবির নামাজের সময় স্বাভাবিক বিদ্যুত সরবারাহ না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুসল্লীরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকমতো ইবাদত বন্দেগী করতে পারছেন না। বিশেষ করে চলমান বোরো ফসল রক্ষায় নালিতাবাড়ী উপজেলায় চাহিদা মাফিক বিদ্যুত সরবারাহের জন্য এলাকার এমপি ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়া যদি বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে প্রাকৃতিকভাবেই সেচ চাহিদা অনেকটা কমে যাবে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিল উদ্দিন বলেন, আমাদের বোরোধান খেতের লক্ষণ খুব ভালো। কিন্তু আমরা বিদ্যুত সংকটের কারনে জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছিনা। এতে হুমকীতে পড়েছে আমাদের বোরো আবাদ। আবাদের শেষ পর্যন্ত চাহিদা মতো জমিতে সেচ দিতে না পারলে কৃষকরে ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ফসল রক্ষার্থে লোডশেডিং কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা দরকার।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বিএডিসির সেচপাম্প মালিক কামাল হোসেন ও সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা চেল্লাখালী নদীতে বিএডিসিরি সেচপাম্প বসিয়েছি। নদীতে স্বাভাবিক পানিও প্রবাহিত আছে। কিন্তু আমরা বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারনে সেচপাম্প চালাতে পারছি না। একটানা দুই ঘন্টাও বিদ্যুত পাচ্ছিনা। সময় মতো সেচযন্ত্র চালাতে না পারায় এখন কৃষকের জমি ফেটে যাচ্ছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে না পেরে অনেক সময় আমাদের সাথে র্দুব্যবহার করছে। তারা আরো বলেন, শহরে বিদ্যুত বিতরণ সীমিত করে কৃষকের ফসল বাঁচাতে গ্রামে কমপক্ষে একটানা ৮ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা হলে চলমান বোরো ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা। কৃষকের বোরো ফসল রক্ষায় লোডশেডিং কমাতে আমরা বিদ্যুত বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রæত পদক্ষেপ নিচ্ছি।
জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আখতারুজ্জামান জানান, চলমান মাহে রমজান, বোরো আবাদ ও গরমের কারনে বিদ্যুতের দ্বিগুণ চাহিদা বেড়েছে। তাছাড়া নালিতাবাড়ীত ২০ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে ৬/৭ মেঘাওয়াট বিদ্যুত বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। তাই বোরো মৌসুমে কৃষকের খেতে স্বাভাবিক সেচ দিতে অতিরিক্ত বিদ্যুত বরাদ্দের জন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি ইলিশায় রিছিল বলেন, বিদ্যুত সংকট একটি জাতীয় সমস্যা। তাই চলমান মাহে রমজানে মুসল্লীদের কষ্ট কমাতে ও চলমান বোরো আবাদে কৃষকের ফসল রক্ষার্থে আমরা বিদ্যুত বিভাগের সাথে কথা বলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবারাহে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।