জীবন যতই এগিয়ে যায়, ততই কতো পরিচয়ের সাথে জড়িয়ে যাই। লক্ষ্য করেছি কেউ কেউ জীবন আনন্দে ভরিয়ে দেয়,কেউ স্বার্থ নিয়ে চলে আবার কেউ জীবন উপাখ্যান এ কিছু দুঃখের পাতা জুড়তে আসে। আর,কিছু অনুপ্রবেশ তো থাকেই সময় কাটানোর জন্য।
আমি করোনার সময় খুবই অসুস্থ ছিলাম। তখন আমার মা,স্ত্রী,ছোট ভাই ও ছেলে মেয়ে ছাড়া কেউ পাশে ছিলো না। আমি লেখা লেখি শুরু করি ৮ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়। আমার প্রথম কবিতা,, তোমায় স্বপ্ন দেখি।আমার সাংবাদিকতা শুরু করি ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চুয়াডাঙ্গা দর্পন পত্রিকা থেকে।সাংবাদিকতার জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আর একদিন লিখবো।যাই হোক।আমি ফেইসবুক আইডি চালায় ২০১০ ইংরেজি সাল থেকে সেই থেকে আমার কিছু স্কুল কলেজের বন্ধু খুঁজে পায় আমাকে।তার মধ্যে একজন আমার সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তো।ওর নাম টা ধরে নিলাম,নাজনীন।ওর সাথে আমার ,পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান দখলের লড়াই জারি থাকতো। চতুর্থ শ্রেণীর পর আমরা আলাদা হই। নাজনীন অঙ্কুর স্কুলে ভর্তি হয় আর আমি তো আমার আগের স্কুল কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে যাই।ওর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ এর প্রশ্ন ই ছিল না। তবে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ওকে যাতায়াত করতে দেখতাম কিন্তু কোনো দিন কোনো কথা হয়নি। ওকে দেখতাম আমাদের বাড়ির সামনে আড়চোখে তাকিয়ে চলে যেত। ফেসবুক এ আমাকে খুঁজে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। আমি ও কালক্ষেপ না করে, পুরনো বন্ধু আর আমার এলাকায় থাকা বন্ধু হিসেবে সাথে সাথেই একসেপ্ট করে নেই।ও তখন ভারতে চলে যায় বাবা,মার সাথে ।রাতে মাঝে মাঝে মেসেজ করতো আর আমি এতো দূরে থাকি সবাই কে ছেড়ে,কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দুঃখ প্রকাশ করতো। কয়েকজন পুরনো বন্ধু র কথা ও বলতো। কিন্তু সেই কোন ছোটবেলার কথা আমার সবার কথা মনেও নেই। ছাত্রী হিসেবে ও খুবই ভালো বিজ্ঞান এর ছাত্রী ছিলো। আমিও বিজ্ঞান এর ছাত্র ছিলাম।তা হলে নাজনীন ভীষণ সাহিত্য অনুরাগী।ওর মেসেজে ,রবীন্দ্রনাথ বেশি থাকতেন। কখনো গানের লাইনে আবার কখনো বা কবিতার লাইন ধরে। আমি বলতাম, “আরে এই লাইন টা কোন্ কাব্য গ্রন্থ র বল”।ও বলতো “রবিঠাকুরের বলাকা টা পড়বি তো আবার”। শেষের কবিতা র কিছু লাইন ঝরঝর করে লিখে দিত। ওকে উত্তর দেওয়ার জন্য আমি ও বলাকা খুলে পড়তাম। আমি ভাবতাম , আমি ই বা লিখবো না কেন।বেশ মজা লাগত। গানের লাইন নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। কোলকাতা তে একা থাকতো তাই কিছু টা নিঃসঙ্গ বোধ কাজ করতো। হঠাৎ খেয়াল করলাম, গানের লাইন, কবিতার লাইন এর অর্থ গুলো বদলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ গান প্রেম পর্যায়ের থেকে লেখা হতে লাগলো। মেসেজ এর বয়ানেও কেমন পরিবর্তন এলো। একদিন রহস্যের জট খুলে দিল নিজেই। ও পড়তো লালমাটিয়া মহিলা কলেজে।আমি পড়তাম ৩শ মাইল দূরে দর্শনা সরকারি কলেজে।ও প্রায় প্রানের শহর দর্শনাতে চলে আসতো মাঝে মধ্যে।দর্শনা এসে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাকে এক ঝলক দেখার আশায়।অথচ কখনো আমার সামনে আসার সাহস টুকু সঞ্চয় করতে পারে নি। মনের ইচ্ছে মনে ই সমাধিস্থ করেছে। আমার বৃত্তে ঢুকতে ভীষণ অসহায় মনে করেছে নিজেকে।আজ এতো বছর পরে এসব কথা শুনে আমার ভাবনা অনুভূতি গুলো কেমন পথ হারিয়ে ফেললো। আমি বললাম”,তুই কখনও আমার সামনেই তো আসিস নি”! বলে, “কি অদ্ভুত একটা দোটানা কাজ করতো মনে।” আমি এবার বলতে বাধ্য হলাম যে ,”তুই এতো গুলো বছর ধরে এই কথা গুলো যখন মনে বন্দী করে রেখেছিলি তবে এখন তাকে মুক্তি দিলি কেন,বল আমাকে “,? বললো,”মনের সিন্দুকে রাখা গোপন কথা গুলো তোকে আবার দেখে যে মুক্তি র ডানা মেলে দিতে চাইলো।ঐ সময় টা যেন ঝড়ের বেগে সামনে চলে এলো। আমরা সবাই এখন বেলাশেষে র পথিক। তাই ভাবলাম তোকে সব কিছু জানিয়ে যাই। কথা গুলো যে গুমরে মরতো বোবা কান্নায়।জানিস,এমন কিছু কথা সকলের ই হয়তো থাকে যা একেবারেই নিজস্ব। কিন্তু কারও সঙ্গে ভাগ করে নিলে হয়তো তার ভারটা কিছু টা লাঘব হয়।”তখন ,উত্তর দেওয়ার মতো কোনো শব্দ আমার ভান্ডারে ছিল না। তাই নীরবতার জালে জড়িয়ে গেলাম। নিজের মনে বললাম, ভালোবাসা ভালো , পবিত্র ও। কিন্তু ভালোবাসার ও সময় আছে। কিছু বিষয় সময়ের কাছে বিলিয়ে দিতে হয় আর কিছু কথা বলতে ও হয়। অনেক না বলা বাণী, ঘন যামিনীর মাঝে পথ হারিয়ে ফেলে। কতো গল্প অসমাপ্ত রয়ে যায়। গল্পের চরিত্ররা তাদের স্থান খুঁজে পাওয়ার আগেই কলমের কালি শেষ হয়ে যায়। কিছু দীর্ঘ শ্বাস সাথে নিয়ে বললাম, “আমরা নিশ্চয়ই ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে পারি বাকি দিনগুলো? জটিল জীবন আমাদের, আর বেশি জটিল নাই বা করলাম।যেমন ছিলাম তেমনি থাকি অজানা অপূর্ণ গল্প হয়ে। এভাবেই ভালো থাকবো। একজন ভালো বন্ধু, জীবনের এক শ্রেষ্ঠ উপহার। উন্মুক্ত মন নিয়ে বন্ধুত্বের উন্মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে তো কোন মানা নেই। জীবনের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে একজন ভালো বন্ধু।তোর ভালোবাসার রূপান্তর ঘটুক বন্ধুত্ব পূর্ণ ভালোবাসায়।জানিস তো বন্ধুত্বের বন্ধন কিন্তু খুব দামী।একে বাঁচিয়ে রাখা মানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট থাকা।”
বেঁচে রইলো বন্ধুত্ব। অচেনায় ডানা মেলে দিল কিছু অজানা গল্পকথা। রইলো পাশে থাকার আশ্বাস।
ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। প্রয়োজনে রূপ বদল হতে পারে তবে মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে। আমরা সকলেই ভালোবাসাকে বাঁচতে দিতে চাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,
ইয়াসির আরাফাত মিলন।
সদস্য,
ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।