দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী দেশসেরা খ্যাতিমান সিআইপি দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান, দিলীপ কুমারের পক্ষে প্রচারণার সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা লীগ ও যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত, পুরুষ নেতা-কর্মীদের উপর নগ্ন হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমারকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগের মামলায় এবার ফেঁসে গেলেন বহু অভিযোগে অভিযুক্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিক।
অপরদিকে নির্বাচনী সহিংসতার জের ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায়ে চেয়ারম্যান এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলকে সাময়ীকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে ও তাঁর সমর্থকদের সাথে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা সেইসময় টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
স্থানীয় পত্রপত্রিকা ছাড়াও খোদ রাজধানীর বেশকিছু জাতীয় দৈনিক ও অসংখ্য অনলাইন পোর্টালে এসব ঘটনা পাঠ করে দেশবাসী।
ফলে নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশনসহ পুলিশ প্রশাসন।
এদিক নাগদহ চেয়ারম্যান বিপুল বরখাস্তের পর থেকেই মানিক চেয়ারম্যানকে নিয়ে অলিতে গলিতে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। যদিও মামলা চলাকালীন সময়ে সেই মামলার বিষয়ে মন্তব্য করার নিয়ম নেই দেশের প্রচলতি আইনে। তবে পাবলিকের মুখ থামাবে কে? এই ঘটনা ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নিশ্চিত বিজয়কে ছলে বলে কৌশলে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলেও চলছে জোর গুঞ্জন। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকানে একটা কথায় সবাই বলাবলি করছে যে, ” এক যাত্রায় দুই ফল” যেনো না হয়। এদিকে মানিকের বিষয়টি বিচারাধীন থাকলেও তার কাছের সহযোগীরা রয়েছে খোশমেজাজে। তাদের ধারণা যেকোনো কৌশলে স্বাক্ষীসাবুদ পাল্টে দিয়ে হলেও মানিকের আইনজীবীরা তাকে বেকসুর খালাস করে আনবেন বলে তারা দৃঢ় আশাবাদী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিকের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে মামলা হয়েছে। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার রাহুল রায় বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ভান্ডারদহ গ্রামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ‘ঈগল’ প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সে সময় কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক তার কর্মী-সর্মথকদের নিয়ে দিলীপ কুমারের প্রচারণার কাজে বাধা দেন এবং তার নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয় মর্মে মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন দিলীপ কুমার। এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মানিকসহ পাঁচজনকে আটক করে। ঘটনার রাতেই ঈগল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাড. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মানিককে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর ওই মামলায় আদালত চারজনের জামিন দিলেও হাসানুজ্জামান মানিকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
পরে ২৬ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা আদালত থেকে জামিন পান ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক। এরপর গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন সহকারে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উপস্থিত হয়ে এক জনসমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। প্রকাশ্য বক্তব্যে হাসানুজ্জামান মানিক বলেন, ‘৮ তারিখে কনে থাকবেন, ৮ তারিখে কোথায় যাবেন, ৮ তারিখে আমার এলাকায় আপনাকে থাকতে হবে, আপনি যদি আমার এলাকার সন্তান হন, আপনার সাথে দেখা হবে’। এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। যা নির্বাচন মনিটরিং কমিটির নজরে আসে।
বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গত ১১ জানুয়ারি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর ‘১৭.০০.০০০০.০৪৫.৪৮.০০৭.২৩ স্মারক, তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪’ এক পত্র প্রেরণ করেন। সেখানে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক গত রোববার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার রাহুল রায় বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মানিকের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর ১৪৫/২৪ মামলাটি দায়ের করেন।
নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল সাময়িক বরখাস্ত
অপরদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার স্বাক্ষরিত ৪৬.০০,১৮০০,০১৭,২৭.০০২,২০-৯০ নম্বর প্রজ্ঞাপনে এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলকে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন ১১নং নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জি,আর মামলা নং-৪৯/২০২৩ এর অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক গত ৯/১০/২০২৩ তারিখে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক, চুয়াডাঙ্গা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু, নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ইমতিয়াজ বিপুল কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য; গত বছর ১১ মার্চ আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক জহুরুলনগর গ্রামের আত্তাব মন্ডলের ছেলে দবির উদ্দিন, খবির উদ্দিন, আনিস ও একই গ্রামের ইসলাম লস্করের ছেলে মিয়াসহ বিদ্রোহী প্রার্থীর কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এ ঘটনায় আহত দবিরের ছেলে খোকন ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর ১৩ দিন আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টায় দবিরের মৃত্যু হলে, মামলায় হত্যা মামলার ধারা যুক্ত হয়। পরে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে জিআর ৪৯/২০২৩ মামলটি গৃহীত হয়।
এদিকে বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান মানিকের এ মামলার বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে আমজনতার পাশাপাশি দেশ বিদেশের সর্বস্তরের গণমাধ্যমের।।
এ প্রসঙ্গে জনতার এমপি সিআইপি দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সাথে কথা বললে তিনি প্রথমেই ধন্যবাদ জানান নির্বাচন কমিশনকে। বিশেষকরে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে তাঁর সাথে এবং তার সমর্থক নেতাকর্মীদের সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে রাষ্ট্রীয় আদেশের পক্ষে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গা সদর নির্বাচন অফিসার রাহুল রায় বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেয়ারম্যান মানিকের বিরুদ্ধে রোববার মামলা দায়ের করাই তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি এ মামলার রায় স্বাক্ষী প্রমাণের দুর্বলতার জের ধরে ভিন্ন পথে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, গণমাধ্যমের এমন ইঙ্গিতের জবাবে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমার ও আমার কর্মীদের উপর ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা জেলাবাসী যেমন জানে, তেমনি গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় জানে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ। তাই আদালত যে রায়ই দিবেন তা হবে দেশের মঙ্গলার্থে বলেও সিআইপি দিলীপ কুমার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।।