সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাণীগঞ্জ বাজারটি এবার কম রাজস্বে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রত্যাশিত রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বহুল প্রচারণার অভাবে নিলামে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি অনেক আগ্রহী ইজারাদারগণ। তাই পুনরায় দরপত্র আহবানের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।
জানাগেছে, গত বছর ১৪৩০ বাংলা সনে রাণীগঞ্জ বাজারটি ৫৯ লাখ টাকায় ইজারা প্রদান করা হয়। এ বছর ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য ইজারামূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৪৭ লাখ টাকায় ইজারা প্রদান করায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এতে গত বছর থেকে এবার কমপক্ষে ১৩ লাখ টাকা রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে প্রচারণার অভাবে ইজারা ডাকে অংশ নিতে পারেননি অনেক আগ্রহী ইজারাদারগণ। তাই সর্বোচ্চ সরকারি রাজস্ব প্রদানের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ক্ষুব্দ বঞ্চিত ইজারাদারগণের মধ্যে মো.আজমল হোসেন পুরনায় দরপত্র আহবানের জন্য ১ ফেব্রæয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। যাতে ইজারামূল্যের ২৫ ভাগ হিসেবে অগ্রিম ব্যাংক পে-অর্ডারের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ১২ লাখ টাকা জমা করে দিয়েছেন। পুনরায় দরপত্র আহবান করা হলে বেশি ইজারামূল্যে বাজার ইজারা নিতে তিনি অংশ গ্রহণ করবেন। এতে বেশি মূল্যে ইজারা না হলে অথবা তিনি ইজারায় অংশ না নিলে তার জমাকৃত ১২ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ। এমন অঙ্গিকার তিনি আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন। দাখিলকৃত আবেদনের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার সিলেট, পরিচালক স্থানীয় সরকার সিলেট, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার সুনামগঞ্জ, উপজেলা চেয়ারম্যান জগন্নাথপুর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর এর নিকট প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে আবেদনকারী আজমল হোসেন বলেন, গত বছর ৫৯ লাখ টাকায় রাণীগঞ্জ বাজার ইজারা গেলেও এবার মাত্র ৪৭ লাখ টাকায় ইজারা প্রদানের বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। বহুল প্রচারের অভাবে আমি সহ অন্যান্য ইজারাদারগণ জানতে পারেননি। শুধু তাই নয়, এবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে ৪৫, ৪৬ ও ৪৭ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে টেন্ডার ড্রপ করেছেন। ব্যক্তি লাভে সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে যোগাযোগীমুলে এ ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়ে প্রাপ্ত সরকারি রাজস্ব প্রদানের দাবিতে পুনরায় দরপত্র আহবানের জন্য আবেদন করেছি। যাতে অগ্রিম ১২ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমে করে দিয়েছি। পুনরায় দরপত্রে আমি অংশ না নিলে জমাকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ।
২ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার এ বিষয়ে বঞ্চিত অন্যান্য ইজারাদারগণনের মধ্যে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন জানান, পুনরায় দরপত্র আহবান সহ বহুল প্রচারের মাধ্যমে আগ্রহী সকল ইজারাদারগণের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা হলে রাণীগঞ্জ বাজারটি এবার কমপক্ষে ৬০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ইজারামূল্যে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম জানান, রাণীগঞ্জ বাজার ইজারার বিষয়টি আইনগত ভাবে যা হয়, আমি সমর্থন করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার বেশি মূল্যে ইজারা হলে আমার পরিষদও বেশি ট্যাক্স পাবে। তবে প্রতিযোতিামূলক অতিরিক্ত মূল্যে আনতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতির শিকার হতে হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, রাণীগঞ্জ বাজার ইজারার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আগামী সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কেউ রি-টেন্ডারের আবেদন করতে পারেন। জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, রাণীগঞ্জ বাজার ইজারা সংক্রান্ত রি-টেন্ডারের আবেদনের অনুলিপি পেয়েছি। আগামী সভায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করবো।