মুসাফির’ হিসেবে যিনি পরিচিত। বৃহত্তর চলনবিল এলাকার মাটি আর মানুষের সাথে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। মুখে যার সব সময় লেগে থাকে হাঁসির ঝলক । বাংলা সাহিত্যে যার সদর্প পদচারণা। তিনি কবি মুহাম্মদ নুরুজ্জামান চৌধুরী। পেশা শিক্ষকতা। পিতা মরহুম ইউনুছ আলী চৌধুরী ওরফে আসহাব আলী। মাতা মরহুমা সালমা আলী ।
তিনি ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার কাওয়াক গ্রামের মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বড় পাথাইলহাট গ্রামে। শিক্ষকতা পেশার সুবাদে পার্থিব স্থায়ী নিবাস গড়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের শরৎনগর বাজার এলাকায়। ৩ সন্তানের জনক তিনি ।
১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার সফর আলী কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা শুরুর মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন । এরপর ঢাকা জেলার কুশারা নবযুগ কলেজ ও গালিমপুর ইছামতি কলেজে বছর খানেক শিক্ষকতা করেন। অবশেষে ১৯৮১ সালে পাবনার ভাঙ্গুড়া শরৎনগর ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসায় বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করে ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বৈচিত্র্যময় ও গবেষণাধর্মী লেখালেখি নিয়ে সময় পার করছেন। তাঁর সনদপ্রাপ্ত নাম মুহাম্মদ নুরুজ্জামান চৌধুরী হলেও সাহিত্য জগতে তিনি ‘কবি মুসাফির’ হিসেবে খ্যাত ও পরিচিত ।
একাধারে তিনি কবি, লেখক, সাংবাদিক, গীতিকার, কণ্ঠ ও হস্ত শিল্পী এবং ইসলামিক চিন্তাবিদ। বহু প্রতিভার অধিকারী এ মানুষটি ১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাস করেন। বাংলা বিষয়ের ছাত্র হলেও ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় রয়েছে তাঁর অসাধারণ দখল। কথা হয় এ গুণী লেখকের সাথে । বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর বিচরণ সম্পর্কে তিনি জানান, তাঁর প্রথম লেখা “কোথা সে মুসলমান” প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ১৯৭৪ সালে। তাঁর লেখা তাওহীদ, নেপথ্যের সংলাপ, সত্য পথের ছড়া, গাঁও গেরামে, কণ্ঠস্বর প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়া প্রায় ৫০টি গদ্য ও ২০টি কাব্য সাহিত্য পান্ডুলিপি আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তাঁর লেখা নাটক, কবিতা ও গান পরিবেশিত হয়েছে। তাঁর লেখা ‘অনুপ্রাশ’ শীর্ষক একটি কবিতা বিগত ১৯৯৪ সালে ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনের চারুপাঠ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করা হয়। “কাকলি কেকার কুহ কলতান কর্ণকুহরে কবিতার গান/ কদম্বে শাখে কম্পনে/কাজল কালিমা কাবেরীর জল কাঁপে কিঙ্কিনি/কুমুদ কমল কলমি লতার ক্রন্দনে”- কবিতাটিতে তিনি “ক” বর্ণকে ৩শ’ বার ব্যবহার করে প্রশংসিত হন।
সাহিত্যে জগতে বিশেষ অবদান রাখায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে তিনি সম্মাননা লাভ করেছেন। জনসংখ্যা শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা (১৯৮৩), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পাবনা জেলা শাখা (১৯৮৫), বাংলাদেশ জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, টাঙ্গাইল (১৯৯১), উত্তরণ গণপাঠাগার কাশিনাথপুর, পাবনা (১৯৯৪),ইন্টারন্যাশনাল বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার, কেমব্রীজ, ইংল্যান্ড থেকে ম্যান অব দি এয়ার, (১৯৯৯-২০০০), পয়গাম ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড, সুইজারল্যান্ড (২০০০), আই.বি.সি. কেমব্রীজ, ইংল্যান্ড থেকে ইন্টারন্যাশনাল পার্সনালিটি অব দি এয়ার (২০০১),দি আমেরিকান বাদ্যোল ইনষ্টিটিউট থেকে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য (২০০২), মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (২০০২), প্রজন্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারায়ণগঞ্জ (২০০৪), ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি: চ্যানেল আই, ঢাকা (২০০৮), বাংলাদেশ কবিতা ক্লাব, উত্তরাঞ্চল শাখা, বগুড়া (২০০৮), বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র, পাবনা (২০০৯), জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, পাবনা (২০১০), গাঙচিল সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ,সিরাজগঞ্জ (২০১০), মাসিক আদর্শ নারী, ঢাকা (২০১২),বহুভুজ সাহিত্য পরিষদ, পঞ্চগড় (২০১৩) এবং তমদ্দুন মজলিশ (ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন), ঢাকা(২০১৭) সহ এ পর্যন্ত মোট ৩৫ টি স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
কবি মুসাফির বলেন, “তাঁর প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাকে তিনি কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। শৈশব থেকে যে কবি’র গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, গান, গজল প্রভৃতি পড়েছেন। যাকে মনের মণি কুঠায় ঠাঁই দিয়েছেন, সেই প্রিয় কবির এতো গভীর সান্নিধ্যে এসে করমর্দন করা সত্ত্বেও নির্বাক কবির সাথে হৃদয়ের নিগুঢ় সত্তা থেকে দুটো কথা বিনিময় করতে না পারায় আজও তিনি ব্যথিত।।