দেশের শীর্ষ স্থানিয় ধনী ব্যক্তিত্ব আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সিআইপি দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অপহরণ চেষ্টা ও দিলীপ কুমার সমর্থক চুয়াডাঙ্গা মহিলা আওয়ামীলীগ ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের শাররীকভাবে নিগৃহীত করার মামলায় দুদিন পর জামিনে ফিরে এসে কুতুবপুরের ইউপি চেয়ারম্যান হোয়াইট হাউজের মালিক আলী হাসানুজ্জামান মানিক সীমাহীন ঔদ্ধত্য আর ভুলভাল হিংসাত্মক বক্তব্যর মাধ্যমে নিজেকে “চুয়াডাঙ্গার গডফাদার” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তার পরিচালিত কুতুবপুর ইউপি নামক একটি ফেসবুকে ইতিমধ্যে তার সেই আত্মঘাতি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, উঠেছে নিন্দার ঝড়। এই ধরণের বক্তব্য একজন ইউপি চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে আমজনতা ও গণমাধ্যমের সামনে দিতে পারেন কি-না সে প্রশ্নও উঠেছে। প্রকাশ্যে এবং আড়ালে আবডালে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। কিন্তু চেয়ারম্যান মানিক আছেন খোশ মেজাজে, তিনি ভাবছেন তার ওই ফালতু মিছরির ছুরি মার্কা ভাষণে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নিবেন আর তিনি চুয়াডাঙ্গা সদরের ভোট সেন্টারগুলোতে যেয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে আসবেন। বিষয়টি মামীর হাতের মোয়া নয়, চাইলেই পাওয়া যাবে।
চেয়ারম্যান মানিক প্রকাশ্য ওই ভিডিও বক্তৃতায় বলেছেন, আট তারিখে কিন্তু “আমার এলাকায়” আপনাকে থাকতে হবে। তার কথা শুনলে মনে হয় চুয়াডাঙ্গার ছেলুন মিয়া, প্রয়াত মোজ্জাম্মেল হক এমপি, প্রয়াত শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস এমপি, ইউনুস মিয়া, গেন্দু, মিয়া, লোটাস জোয়ার্দ্দার, মিকাইল জোয়ার্দ্দার সহ সব মিয়া জোয়ার্দ্দার আর আমজনতার বাড়িঘরের দলিল তার পকেটে। সেই চুয়াডাঙ্গার স্বঘোষিত ডন বা ভূস্বামী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার হাস্যকর খেলায় মেতেছে। আর গিরীধারী লাল আগরওয়ালা, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, শ্যামবাবু আর স্বর্গীয় রাম নিরাঞ্জন মহাশয়দের সম্পত্তির কথা তো উহ্যই রাখলাম।
চেয়ারম্যান মানিক যদি তার ওই বক্তব্যে বলতেন “ আমাদের এলাকায় কিন্তু আপনাকে থাকতে হবে” তাহলে রাত জেগে কষ্ট করে স্মৃতি হাতড়ে এই লেখা লেখার প্রয়োজন পড়তোনা। কিন্তু তিনি কি বললেন, “ আমার এলাকায় আপনাকে থাকতে হবে ”। চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী আর চুয়াডাঙ্গা শহরবাসীকে কী আপনার “ কুতুবপুরের ধৈইঞ্চা” মনে হয় ??
আপনার আগেও বহু রংবাজ, গুন্ডা, বোমারু, কিলার, চরমপন্থী নেতা-কর্মীদের দেখার দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর ন্যায় চুয়াডাঙ্গা শহরবাসীর হয়েছে।
লান্টু, নান্টু, আলেয়া ভাবী থেকে কসাই সিরাজ, দেবু, লালন, বিধান, সন্যাসী, রবিন, রবি দাদা ওরফে জামাল, দাদা তপন, আকাশ, আবির হাসান থেকে শুরু করে বহু মানুষের গুন্ডামী আর মাস্তানীর স্বাক্ষী এই চুয়াডাঙ্গা শহরবাসী।
“ হাতি ঘোড়া গেলো তল, মশা বলে কতো জল”
এক সময় আমাদের চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে, হাতে গোনা কয়েকজন পেশী শক্তিতে বলিয়ান রংবাজকে মানুষ খুব সমীহ করতো। যেমন, মাস্তান শাহনেওয়াজ, আলাউদ্দিন হেলা, প্রয়াত কমিশনার আইনুল হক পচা, প্রয়াত বুশা, মসজিদ পাড়ার কমিশনার মাস্তান, কোর্টপাড়ার বাহারুল, বাদুরতলার হাসান, পোষ্ট অফিস পাড়ার কার্ফি এদের কারো মতোই আপনি হতে পারেন নি। কারণ এতক্ষণ যাদের নাম বললাম এরা কেউ সরকারি খাস জমি বা ভ্যানওয়ালা রিক্সাওয়ালার জমি কব্জা করেননি, এরা কেউ সহজ সরল চাষীদের বোকা বানিয়ে তিন ফসলী আবাদী জমির মাটি ইট ভাটায় পাচার করেনি। এরা কেউ কথিত হোয়াইট হাউজ বানিয়ে মানুষের মনে ত্রাসের সৃষ্টি করেনি।
চেয়ারম্যান মানিক আপনি কি বলেছেন, “ আট তারিখে কনে থাকবেন? আট তারিখে কোথায় যাবেন? আট তারিখে কিন্তু আমার এলাকায় থাকতে হবে। যদি আমার এলাকার সন্তান হন, আপনার সাথে কিন্তু আমার দেখা হবে। এমন কিছু কইরেন না, যাতে আট তারিখের পর “আপনার সাথে আমার কথা বন্ধ হয়ে যায়”। আরে মিয়া তোমার সাথে কথা বন্ধ হয়ে গেলে কী দিলীপ কুমারের মতো ধনী লোকেরা না খেয়ে মরবে, না-কি তোমার মুখের অমৃত বাণী না শুনতে পেয়ে পেট ফেটে মারা যাবে ? বারো হাত কাকড়ের তেরো হাত বীজের আবাদ না করে যতোদূর হাত যায় ততোদূর চূলকান, ভুলভাল বক্তব্য বাদ দিন, অহংকার পরিহার করুন।
আমরা লক্ষ্য করছি কুতুবপুর চেয়ারম্যানের সিটে বসার পর থেকে আপনার ঔদ্ধত্ব্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষকে আদম ভাবা শুরু করেছেন। গরীব ভোটারদের পা ফাটা মনে করেন। এগুলো ভালোনা। কারণ আমাদের জেলা আওয়ামীলীগে আপনার পিতার অবদান কোনো অংশে কম নয়। একজন শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সন্তান হিসেবে জেলায় আপনি অপরাজনীতির বীজ বপন করতে পারেন না।।আপনি ভাবছেন আপনাকে ভালোবেসে দফায় দফায় মানুষ আপনাকে ভোট দিচ্ছে ? না, এসব সত্য নয়। সত্য এটা যে আপনাকে মানিক থেকে চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিক বানাবার মূল কারীগর সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন“মেজ ভাই” ও আওয়ামী নেতাকর্মীদের অবদান ৭০ শতাংশ, আর আপনার জন্মদাতা পিতার ব্যক্তিগত ভালোবাসার ভোট ব্যাংক থেকে পেয়েছেন ২৫ শতাংশ। আর বাকি মাত্র ৫ পার্সেন্ট ভোট আপনার ব্যক্তিগত অর্জন।
আর আমার এ কথা যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে সদর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আপনি সাময়ীক সময়ের জন্য ইস্তফা দিন, দেখুন কী হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কখনো দল যদি আপনাকে বহিস্কারে বাধ্য হয়, তাহলে আপনার অস্তিত্ব সংকট শুরু হয়ে যাবে।
যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন কার কি মার্কা এটা বিষয় নয়, প্রত্যেককে আমজনতার লিগ্যাল ভোটে নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসতে হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার প্রকাশ্যে বক্তৃতায় ও গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন, দলের যে কেউ যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারে, এতে কোনো সমস্যা নেই।
তাহলে আপনার সমস্যাটা কোথায়? কেনো বসু ভাণ্ডারদোহাতে যেয়ে দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, আওয়ামী মহিলালীগ, যুব মহিলালীগের ওপর দলবল নিয়ে হামলে পরলেন? এর সূদুর প্রসারী ব্যাখ্যাটা আমজনতা জানতে চায়।
গণমাধ্যমকর্মীরা অনেকেই জানেন যে, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের সিল ছাপ্পর আপনার গায়ে লাগার পর থেকেই আপনি সব বিষয়ে লাইমলাইটে থাকতে চাইছেন। এটা সাধারণ মানুষ না বুঝলেও গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই কিন্তু জানেন, আপনার মনের লালিত স্বপ্ন বা নেক্সট টার্গেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদবী অর্জন। তবে সেটি এক্ষুণি সম্ভব নয় “দিল্লি বেশ খানিকটা দূর”।।
আর আপনার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদবীটাও আপনার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এখানেও আপনার জন্মদাতা পিতার রাজনৈতিক অর্জনের প্রতি সম্মান দেখাতে যেয়েই চুয়াডাঙ্গা জেলার অভিভাবক সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ভাই আপনাকে উক্ত পদে বসিয়েছে বা আপনার পিতা সমতূল্য অনেকের ধারাবাহিক সুপারিশ এর কারণে মেজোভাই শেষমেষ আপনাকে ওই পদে বসিয়ে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে। তাহলে কিসের এতো অহমিকা, কিসের অহংকার ??
আপনি যে দলটির হয়ে বর্তমানে নিজেকে অনেক কিছু ভাবছেন, যাকে যা ইচ্ছে বলছেন, আপনি জানেন এন্ট্রি আওয়ামী জোন হিসেবে পরিচিত এই চুয়াডাঙ্গার মাটিতে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে কতোটা রক্ত মেধা আর শ্রম ঝরাতে হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলনের উনচল্লিশ দিনের দুর্বিসহ জীবন আর অনিশ্চিয়তার রাজনীতির প্রেক্ষাপট কখনো কী বাবলা তলায় বসে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন? কখনো মিছিল মিটিং শেষে ঘর্মাক্ত শরীরে সবেদা তলায় বসে একপ্লেট খিচুড়ি খেয়ে নেতার নির্দেশ মতো আবারো রাতের আঁধারে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছেন? আর্মি পরিচালিত অপারেশন ক্লিন হার্ট আর কম্বিং অপারেশনের রিমান্ডে কখনো বিরোধী দলের তকমা লেগে থাকা আওয়ামী বা যুবলীগ নেতা হিসেবে কখনো মেজর জামিল হাসানদের মুখোমুখি হয়েছেন?? কখনো কি জীবন বাজী রেখে লিডারের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পে যেয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন ?? জানি এর কোনো উত্তর আপনি দিতে পারবেন না। কারণ আমি ছিলেন তখন নিতান্তই নাবালেক।
আপনি জানেন পেশিশক্তি আর মিছিল মিটিং করলেই কি সব রাজনীতি করা হয়ে যায় ?
আপনি জানেন এই দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বা মাড়োয়ারী সম্প্রদায় এবং সনাতন ধর্মের বিত্তশালী মানুষদের অর্থনৈতিক সাপোর্ট আজকের আওয়ামীলীগকে কতোটা বেগবান করেছে, তাদের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন এই দলটির ছাত্র ও যুব সমাজকে কতোটা উজ্জীবিত করেছে। যার স্বাক্ষী নিতে হলে আপনাকে বেশি প্রবীণ নেতাদের কাছে না গেলেও চলবে, কারণ মেজভাইয়ের বরাবরের বিরতিহীন সহযোদ্ধা রঞ্জু আসমান কাদেররাও এগুলো অনেককিছু জানে। সময় করে একসময় শুনে নিয়েন।
একসময় আপনার ওই দলটিকে কারা প্রাণবন্ত করতো, কবরী রোড কারা গরম করে রাখতো, বাবলাতলায় প্রতিদিন কারা হাজিরা দিতো এগুলো জানতে হবে। ৮০’র দশক আর ৯০’র দশকের রাজনীতিতে বিরোধী দলে থাকা জেলা আওয়ামীলীগের ইতিবৃত্ত বুঝতে হবে।জানি এসব প্রশ্নের উত্তর জানার বা খোঁজার সময় আপনার হাতে নেই।
তাই শুধু শুধু গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। অসংখ্য নেতা-কর্মীর রক্ত ঘাম আর শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত জেলা আওয়ামীলীগের আজকের Network মাথায় চড়ে মাখা সন্দেশ খাচ্ছেন তাই খান। ভাঙা সাইকেল নিয়ে চলন্ত ট্রেনকে ধাক্কা দিতে যেয়েন না, নইলে সাইকেলের বল বিয়ারিং স্পোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
খোদা হাফেজ, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।।।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
হেড অব নিউজ দৈনিক খবরের আলো,
সম্পাদক “ আজকের পেপার”
ঢাকা-বাংলাদেশ।।