চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওমায়ী নেতা সিআইপি দিলীপ কুমার আগারওয়ালার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অপহরণের চেষ্টা, অকথ্য ভাষায় জাত-পাত তুলে গালিগালাজ ও কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাদ যায়নি আওয়ামী মহিলালীগ, যুব মহিলালীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেত্রীও। এসব কথা এখন দেশের মানুষ জেনে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বহির্বিশ্বও এসব ঘটনা দু:খজনকভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালার উপরে হামলা করেছেন ভালো কথা কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সিইসি’র অঙ্গিকার ও ওয়াদার মর্যাদা কী রাখতে পেরেছেন ??
এম্নিতেই স্বাধীনতার পর থেকে ৯০ এর দশকের শেষ পর্যন্ত আমাদের গায়ে সন্ত্রাসের তকমা লেগে ছিলো, ছিলো রক্তাক্ত জনপদ ও সন্ত্রাসের আতুড়ঘরের বিশেষণ। সেসব কলঙ্কিত অধ্যয় থেকে আমরা ৯০ এর দশকের শেষ দিকে প্রয়াত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জননেতা মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সাড়ে তিন হাজার বাঘা-বাঘা চরমপন্থীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে প্রক্রিয়া থেকে লেটার্স মাকর্স নিয়ে পাশ করার গৌরব অর্জন করি।
সে সময় চরমপন্থী আত্মসমর্পণে প্রয়াত জাতীয় নেতা নূর আলম সিদ্দিকী, জাতীয় নেতা মির্জা সুলতান রাজা, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের কিংবদন্তি নেতা ও বর্তমান সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, তৎকালীন সময়ে ঝিনাইদহ থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক অধিবেশন পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক চুয়াডাঙ্গার সন্তান আলী কদর পলাশ, সম্পাদক-প্রকাশক সরদার আল আমিন পরিচালিত দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকা, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি মাস্টার এম রায়হান, কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক মিঠু চৌধুরী, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাইসহ বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।
তবে শতভাগ যে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত হতে পারিনি তা দিলীপ কুমারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অপহরণ চেষ্টার মাধ্যমে তা আবারো মনে করিয়ে দেয়। যে পিস্তল ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মাথায় ঠেকিয়ে অপহরণের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে তা বৈধ লাইসেন্স করা, না কি অবৈধ বা আদেও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক বা তার দলীয় ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্যে একজন জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর মাথায় পিস্তল ঠেকাতে পারেন কি-না, তা খতিয়ে দেখার দায়ভার স্থানিয় পুলিশ প্রশাসনের। আমাদের মতো আদার ব্যাপারীর সে জাহাজের খবর নেওয়ার সুযোগ নেই।।চেষ্টাও করবোনা।
তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এবং নির্বাচন কমিশন বারবার বলে আসছেন, কে ভোটে আসলো এবং কে আসলোনা এটা মূখ্য নয়, মূখ্য এটাই যে প্রত্যেক প্রার্থীকে সরাসরি আমজনতার ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হতে হবে। সে প্রার্থীর মার্কা নৌকা, ঈগল, ট্রাক, ডাব, কেটলি, লাঙল, মশাল, ফুলকপি, ঢেকি যে কোনো মার্কা হতে পারে। আর এজন্য দেশব্যাপী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে রেখেছেন।
কিন্তু আমরা কি দেখছি ? বগুড়ায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী জনপ্রিয় ইউটিউবার হিরো আলম ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে।
মাদারীপুর-তিন আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক আওয়ামীলীগ কর্মী এসকেন্দার খা কে ২ ৩ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ কর্মীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যোগ দেওয়ায় উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে জনসভায় হুমকি দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য। হুমকির ওই ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগ ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত থামছেই না। গত এক সপ্তাহে পাঁচ দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত আটজন।
এরকম অসংখ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে। তবে সব জায়গাতেই যে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের লোকজন হামলার শিকার হয়েছেন তা নয়, ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলে নৌকা প্রার্থীর তিন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
টাঙ্গাইলে নৌকার নির্বাচনী মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন । তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধরা হলেন, বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন (৩০), কর্মী এমদাদুল (৩২) ও মো. সিয়াম (১৮)।
তবে সচেতন সমাজের দৃষ্টিতে কোনো হামলায় গ্রহণযোগ্য নয়, সচেতন সমাজের একজন প্রতিনিধি, একজন সিনিয়র আওয়ামী নেতা বলেছেন, যারা মার খাচ্ছে এবং মারছে তারা সবাই আমাদের সন্তান। আরো খোলসা করে বললে বলতে হয়, উভয় গ্রুপই আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী। তাই এতে ক্ষতি আওয়ামীলীগেরই। তিনি আরও বলেন, যে কোন উপায়ে এ সংঘাত বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা শতভাগ বাস্তবায়িত করতে হবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর আসনে, ঘটে যাওয়া ঘটনা যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন শতভাগ সতর্ক, তবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরকেও সহনশীল হতে হবে বলে মনে করছেন স্থানিয় নেতা-কর্মী ও ভোটার সমর্থকরা।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র আওয়ামী নেতা দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, ঘটে যাওয়া এ হামলায় দিলীপ কুমারের ভোটের বিন্দু মাত্র ক্ষতি তো হয়ইনি বরং রাতারাতি ভোট বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চুয়াডাঙ্গা এক আসনে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ঈগল মার্কাকে না হারাতে পারলে নৌকার বিজয় অনিশ্চিতই থেকে যাবে।।