ওপেনার সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টি-আইনে ৪৪ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সৌম্যর ২২ চার ও দুই ছক্কায় ১৬৯ রানের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ দশমিক ৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২২ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। কিউইদের হয়ে হেনরি নিকোলস ৯৫ ও উইল ইয়ং ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন। দল হারলেও ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের সৌম্য।
নেলসনে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় কিউইরা। ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানে এগোতে থাকেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য ও বিজয়। তবে পঞ্চম ওভারে পেসার এডাম মিলনের প্রথম বলে খোঁচা মেরে স্লিপে টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ফেরেন বিজয়।
বিজয় ফেরার পরও রানের চাকা সচল রাখেন সৌম্য। কিন্তু পরের ওভারে জ্যাক ডাফির বলে কভারে হেনরি নিকোলসকে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৬ রানে বিদায় নেন টাইগার অধিনায়ক শান্ত।
শান্তর বিদায়ে উইকেটে এসে ডাফির দ্বিতীয় শিকার হন লিটন। কভার পয়েন্টে উইল ইয়ংকে ক্যাচ দেন ৬ রান করা লিটন। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর সৌম্যর সঙ্গী হন অভিজ্ঞ মুশফিক। কিছুটা ধীরগতিতে ৫৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সৌম্য। হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দেওয়ার ওভারে দুইবার জীবন পান এই ওপেনার। ওভারের তৃতীয় বলে পেসার জশ ক্লার্কসনের বলে মিড-অফে ক্যাচ ফেলে দেন রাচিন রবীন্দ্র। পঞ্চম বলে লেগ বিফোর আউট হন সৌম্য। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
৩৫তম ওভারে ভাঙে সৌম্য-মুশফিকের জমে যাওয়া জুটি। ডাফির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৪৫ রান করা মুশফিক। মুশি ফেরার পর সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকেন সৌম্য। ৩৭তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৯২ রানে ইনিংসে তৃতীয়বারের মতো জীবন পান তিনি। ও’রুর্কের বলে কভার পয়েন্টে সৌম্যর ক্যাচ ফেলেন ইয়ং।
তিনবার জীবন পেয়ে অবশেষে ৪০তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৫তম ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। সেঞ্চুরি পর সৌম্যর বড় ইনিংস খেলার পথে সঙ্গ দেন মিরাজ ও তানজিদ। ষষ্ঠ উইকেটে মিরাজকে নিয়ে ৫৩ বলে ৬১ রান ও সপ্তম উইকেটে তানজিমের সঙ্গে ২৬ বলে ৪০ রান যোগ করেন সৌম্য।
ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে সমাপ্তি ঘটে সৌম্যর ইনিংসের। ও’রুর্কের বলে নিকোলসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সৌম্য। তার অসাধারণ সেঞ্চুরির ইনিংসে সুবাদে ৪৯ দশমিক ৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের ডাফি ও ও’রুর্ক তিনটি করে উইকেট নেন।
২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ভালো সূচনা করেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ইয়ং ও রবীন্দ্র। ওপেনিং জুটিতে ৬৬ বলে ৭৬ রান যোগ করেন তারা।
এরপর রিশাদের দারুণ ক্যাচে মারমুখী ব্যাট করা রবীন্দ্রকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম বেক-থ্রু এনে দেন পেসার হাসান। ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৪৫ রান করেন রবীন্দ্র।
হেনরি নিকোলসকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ইয়ং। ৫১ বলে অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা ইয়ং। অর্ধশতকের পর নিকোলসকে নিয়ে সহজেই দলের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ২৭তম ওভারে ইয়ংকে থামানোর উপলক্ষ তৈরি করেছিলেন পেসার শরিফুল। কিন্তু ৭৭ রানে থাকা ইংয়ের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়।
জীবন পাওয়া ইয়ংকে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করতে দেননি বাংলাদেশের হাসান। ৩৩তম ওভারে নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ইয়ংকে বিদায় করেন হাসান। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ৮৯ রান করেন ইয়ং। দ্বিতীয় উইকেটে নিকোলসের সঙ্গে ১৩১ বলে ১২৮ রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের পথে রেখে ফেরেন ইয়ং।
২০৪ রানে ইয়ংকে শিকার করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরার পথ দেখান হাসান। এরপর লাথামকে নিয়ে ৪৭ বলে ৫৬ রান যোগ করে কিউইদের জয়ের পথকে সহজ করেন নিকোলস। শরিফুলের মিকার হওয়ার আগে ৯৯ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৯৫ রান করেন নিকোলস।
চতুর্থ উইকেটে ৩৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রান করে ২২ বল বাকি থাকতে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের স্বাদ দেন লাথাম ও ব্লান্ডেল। লাথাম ৩৪ ও ব্লান্ডেল ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন।