ঢাকার নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার সড়ক বিভাজনে দেখা মেলে সারিবদ্ধ নান্দনিক দেশীয় খেজুরগাছ। দূর থেকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। যান্ত্রিক নগরীর কোলাহল ভুলে মন চলে যায় ফেলে আসা গ্রামীণ মেঠোপথে। তবে সঠিক পরিচর্যা ও অবহেলার কারণে গাছগুলো এখন হুমকির মুখে।
আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় সড়ক বিভাজনে দেখা মেলে নান্দনিক এই খেজুরগাছের সারি। নগরীতে পরিবেশবান্ধব এই গাছগুলো ফুটিয়ে তুলেছে সড়কের অনিন্দ্য সৌন্দর্য।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা। মাটির হাড়ি ও বোতল গাছের সাথে বেধে দিচ্ছেন তারা। এটি রস সংগ্রহ করার একটি প্রাচীন পদ্ধতি। গাছিরা রস সংগ্রহ করেন ভোরে আর সন্ধ্যা রাত্রি। তবে ব্যস্ত বায়ু দূষণের তীব্রতার মাঝে সংগ্রহ করা এ রস কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে অনেকের মাঝে রয়েছে নানান কৌতুহলী প্রশ্ন।
নিস্তব্ধ হৃদপিণ্ডের মতো দাঁড়িয়ে থাকা সারিবদ্ধ প্রায় শতাধিক খেজুরগাছ রয়েছে এখানে। প্রতিদিন ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ লিটার রস সংগ্রহ করা হয় বলে জানান পরিচর্যায় নিয়োজিত এক কর্মচারী।
জানা যায়, গাছ প্রতি ইজারা দিয়েছেন ২০০ টাকা। শীতের পুরো মাসজুড়ে রস সংগ্রহ করে তা জাল করে গুড় বানিয়ে তারপর বাজারে বিক্রির উপযোগী করেন তারা।
রাজশাহী থেকে আসা গাছি মো: মিজানুর রহান (৩৮) বলেন, লাভের আশা কইরা এহন দেহি লসের কাতারে। গাছ প্রতি ২০০ টাকা ইজারা নিছি। পাহারা দিয়া রস চুরি থামাইতে পারিনা। প্রতিদিন দুই-চাইরটা হাড়ি ভাঙ্গা পাই। এক একটা হাড়ির (মাটির কলস) দাম ১০০টাকা। একদিনে যদি তিন-চারশত টাকা জরিমানা লাগে তাইলে উপায় কি?
রসের হাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এই গাছগুলো দেখভাল করি তিনজন মানুষ। সকাল বিকাল সন্ধ্যায় কেউ না কেউ আছেই। কত আর দেইখা রাখা যায়। এলাকার পুলাপাইন বাসের হেল্পার কন্ট্রাক্টর রস চুরি কইরা লইয়া যায়। তাও মন খারাপ করিনা। চিন্তা করি যদি শীত আরও পড়ে তাইলে মোটামুটি ভালো রস পামু।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, খেজুরগাছ অত্যন্ত লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব গাছ। সড়ক বিভাজনে নান্দনিক এই গাছগুলো সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। এবং রস থেকে বাড়তি আয়ের উৎস খুজে পাচ্ছে পরিচর্যায় নিয়োজিত যারা তারা। মোটকথা সৌন্দর্য বর্ধনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে এই গাছগুলো।